বড়লেখা প্রতিনিধি

২১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:৫২

চন্দনার পাশে তবু কেউ আছে

চন্দনা বুনার্জীর (৯) জন্ম, বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল চা বাগানে। গত বছরের শারদ উৎসবেও সে মায়ের সাথে, দিদা’র সাথে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শামিল হয়েছে। বছর ঘুরে এবারও পূজা এসেছে। কিন্তু সময় বড় দ্রুত পাল্টে গেছে তার। এবার সেই আনন্দ হয়তো তাকে স্পর্শ করবে না।

প্রায় ৮ মাস আগে এক নৃশংস ঘটনায় তার জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। সে ঘটনায় চোখের সামনে সৎ বাবার দায়ের কোপে মরতে দেখেছে মা, দিদাসহ দুই প্রতিবেশীকে। চারজনকে খুন করে সৎ বাবাও আত্মহত্যা করেন। সেদিন কোনোরকম বেঁচে যায় চন্দনা।

সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব চন্দনার ঠাঁই হয় শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবারে। এবার পূজা উপলক্ষে উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন চা বাগানের ফ্যাক্টরি বাবু অঞ্জনের মাধ্যমে চন্দনাকে শিশু পরিবার থেকে নিয়ে আসেন চা-বাগানে। পরে নিয়ে যান ইউএনও’র কাছে। গত ১৯ অক্টোবর দুপুরে বাবা-মা হারানো শিশুটিকে পূজার আনন্দ দিতে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান কিনে দেন দুই সেট নতুন পোষাক।

সব হারানোর মাঝেও তবু কাউকে না কাউকে পাশে পেয়ে চন্দনার শিশুমন একটু হলেও হয়তো শান্তনা পাবে, আনন্দের ছোঁয়া পাবে। চন্দনার কথায়ও আনন্দের এমন অনুভূতি প্রকাশ পায়। সে জানায়, স্যার পূজায় নতুন কাপড় দিছে। খুব ভালা লাগছে।

এসময় বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, বড়লেখা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মঈন উদ্দিন, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন, সাংবাদিক আব্দুর রব, এ.জে লাভলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন বলেন, ‘নৃশংসতায় শিশু চন্দনা সব হারিয়েছে। অন্য বছর পূজায় আনন্দ করত। পূজা উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবার থেকে চা-বাগানের ফ্যাক্টরি বাবুর মাধ্যমে নিয়ে এসেছি। ফ্যাক্টরি বাবুর বাসায় আছে। পূজার সময়টা যাতে তার আনন্দে কাটে। সব হারোনো বেদনা ভুলে সে যেন খুশি তাকে। এ চেষ্টা করছি। ইউএনও স্যার তার খোঁজ-খবর রাখেন। স্যারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি নতুন কাপড় কিনে দেন।’

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি রোববার ভোরে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্তসংলগ্ন পাল্লাথল চা-বাগানে পারিবারিক কলহ নিয়ে নির্মল কর্মকারের সঙ্গে তার স্ত্রী জলি বুনার্জির ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে সে স্ত্রী জলি বুনার্জিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় জলিকে বাঁচাতে তার মা লক্ষ্মী বুনার্জি ও পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক এবং বসন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় ঘাতক সৎ বাবার দায়ের কোপ থেকে কোনো মতে বেঁচে যায় চন্দনা বুনার্জী। সে দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার দিলে আশাপাশের শ্রমিকরা বাড়ি ঘেরাও করেন। একে একে সবাই শেষ করে ঘরের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে নির্মল কর্মকার। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্বাবধানে চন্দনার ঠাঁই হয় শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবারে।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত