সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ অক্টোবর, ২০২০ ১৫:১৬

ভোতা অস্ত্রের অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু : ডা. শামসুল ইসলাম

ডা. শামসুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক বিভাগ, সিওমেক

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ নিহত রায়হানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিওমেক) ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম পিবিআইয়ের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের বিষয়টি  ডা. শামসুল ইসলাম নিশ্চিত করে জানান, প্রথম ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের সাথে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সামঞ্জস্যতা রয়েছে। ভোতা অস্ত্রের অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে হস্তান্তর করে ফরেনসিক বিভাগ। একইদিন রায়হানের দ্বিতীয় ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে ফরেনসিক বিভাগ। যার প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হলো।

এদিকে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর শেষে ডা. শামসুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রচন্ড মারধর করা হয়েছে। এসব কারণেই তার মৃত্যু হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।

ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় রোববার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। সেদিন তদন্ত দল বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি, কাষ্টঘর ও রায়হানের পরিবারের সাথে কথা বলে।

বিজ্ঞাপন

আর ১৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ, মেজবাহ উদ্দিন, পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় কাউন্সিলর মখলেছুর রহমান কামরানের উপস্থিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর একটি দল আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতি গোরস্থান থেকে রায়হানের মরদেহ উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে আবারও রায়হানের মৃতদেহ দাফন করা হয়।

এরপর ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হয় ওসমানী হাসপাতালের মর্গে। রায়হানের দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য তিন সদস্যে একটি বোর্ড গঠন করা হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান, ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলামকে প্রধান করে এ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রভাষক ডা. দেবেস পোদ্দার, প্রভাষক ডা. আবদুল্লাহ আল হেলাল।

রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত