নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ১৫:৪৮

চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে ১৬ টাকা

দীর্ঘ ছয় বছর পর চা শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের মজুরি বিষয়ক চুক্তি হতে যাচ্ছে। চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ও চা শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে এ চুক্তি হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে চা শ্রমিকদের সঙ্গে এ বিষয়ক চুক্তি করেছিল মালিকপক্ষ। সে সময় চুক্তিতে দৈনিক মজুরি ৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল চা বাগান মালিকপক্ষ।

প্রতি দুই বছরে চুক্তি নবায়নের সঙ্গে সঙ্গে ১৬ টাকা করে মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ছয় বছরে তা আর নবায়ন হয়নি।

অবশেষে ৬ অক্টোবর শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে চুক্তির শর্তাদি এবং এ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে চূড়ান্ত স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে চুক্তিটি। তবে স্বাক্ষর না হলেও নতুন চুক্তি মোতাবেক বকেয়া মজুরি প্রদান শুরু করেছে বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষ।

নতুন চুক্তিতে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ টাকা। আর মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ হয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা। এতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি প্রদানের কথাও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মজুরি না পাওয়ায় এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।

চুক্তি বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, আমাদের দাবি ছিল দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা করার। কিন্তু মালিকপক্ষ ৮৫ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি।

তিনি বলেন, মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চায়ের উত্পাদন ও দাম কমে গেছে। তাই ৮৫ টাকার বেশি মজুরি দিতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

সিলেটের চা শ্রমিক সংঘ, লাক্কাতুরা বাগান শাখার সভাপতি বীরেন সিংহ বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর পর পর চুক্তি নবায়ন এবং ১৬ টাকা করে মজুরি বৃদ্ধির কথা ছিল। সে অনুযায়ী ছয় বছরে মজুরি ৪৮ টাকা বেড়ে ৯৬ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু মজুরি হয়েছে মাত্র ৮৫ টাকা। বর্তমান বাজারে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি দিয়েও চলা দুষ্কর। আর ৮৫ টাকায় তো কিছুই হওয়ার নয়।

তবে চা বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে গত ছয় বছর চুক্তি নবায়ন হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের বিরোধ নিয়ে আদালতেও মামলা চলছিল। তবে চুক্তি নবায়ন না হলেও সরকারের নির্দেশে মজুরি ৪৮ থেকে বাড়িয়ে ৬৯ টাকা করা হয়। গত বছর এ বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এ বছর আমরা চুক্তি নবায়নের উদ্যোগ নিই। এখনো স্বাক্ষর না হলেও চুক্তি অনুসারেই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেয়া শুরু হয়েছে। ২০১৫-এর জানুয়ারি থেকেই তারা বর্ধিত মজুরি পাবেন।

নতুন চুক্তির সমঝোতা স্মারক অনুসারে, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ছাড়াও উত্সব ভাতা ১ হাজার ৭৯৪ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া অবসরকালীন ভাতা সাপ্তাহিক ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ ও অসুস্থতাকালীন ভাতা ৫৫ থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া আনুতোষিক, গোষ্ঠী বীমাসহ বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সাতদিনের মধ্যে উত্পাদন ও কল্যাণ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করার কথা সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ রয়েছে। এ কমিটি উত্পাদন (নিরিখ) ও কল্যাণসংক্রান্ত প্রতিবেদন এক মাসের মধ্যে লেবার হাউজের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের মজুরিসংক্রান্ত উপকমিটি বরাবর দাখিল করবেন। চুক্তি অনুসারে বর্ধিত মজুরি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং বাগান কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করবে।

চা শ্রমিকরা জানান, ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সর্বশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে সময় মজুরি ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা নির্ধারণ হয়। এর পর আর চুক্তি হয়নি। এ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট চুক্তি ছাড়াই মজুরি বাড়িয়ে ৬৯ টাকা করা হয়।

ছয় বছরে মজুরি মাত্র ৩৭ টাকা বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা। তবে শ্রমিকদের ক্ষোভের মধ্যেই বকেয়া বেতন প্রদান শুরু করেছে বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ বলেন, আমাদের কাছে চা সংসদ থেকে জানুয়ারি থেকে বর্ধিত মজুরি প্রদানের চিঠি এসে পৌঁছেছে। আমরা বকেয়া পরিশোধ করতে শুরু করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত