সিলেটে ছাত্রদল নেতা ফয়জুল হক রাজুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহরিয়ার কবিরের আদালতে মামলার অভিযোগ গঠন করে আগামী ২২ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সব আসামির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত ঘোষণার পর রাতে বিজয় মিছিল হয়। বিজয় মিছিল শেষে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে রাত ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী সিলেট ল কলেজের শিক্ষার্থী ফয়জুল হক রাজুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহপ্রচার সম্পাদক ছিলেন।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শাহাপুরের বাসিন্দা ছিলেন রাজু। সিলেট নগরীতে এক চাচার বাসায় থাকতেন। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ফয়জুলের চাচা দবির আলী বাদী হয়ে ওই বছরের ১৩ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ওই মামলা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১২ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার চৌধুরী আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ওই সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদে থাকা আবদুর রকিব চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন দেলোয়ার হোসেনসহ তিনজন। প্রধান আসামি আবদুর রকিব চৌধুরীসহ বাকি আসামিরা পলাতক।

বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হলেও অভিযোগ গঠন করতে প্রায় প্রায় দেড় বছর অপেক্ষায় করতে হয়েছে মামলার বাদীকে। গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের তারিখে রুবেল আহমদ নামের এক আসামি অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি। এ জন্য ওই তারিখেও অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল।

এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত তারিখে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মোর্শেদ নামের এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অভিযোগ গঠন পিছিয়ে ৮ মার্চ ধার্য করা হয়। কিন্তু ওই দিনও আরেক আসামি ‘অসুস্থ’ বলে আদালতকে জানানোয়  বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য হয়।

 বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলজার হোসেন বলেন, অভিযোগ গঠনের পর আদালতে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার জামিনে থাকা আসামি ফাহিম আহমদ ও সাদ্দাম হোসেন নামের দুজন আসামির জামিন বাতিল করেছেন আদালত।

 মামলার অভিযোগ গঠন হওয়ায় বাদী ও নিহত রাজুর চাচা দবির আলী স্বস্তি প্রকাশ করেন। তিনি  বলেন, অভিযোগ গঠন হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে উদ্বেগ এখনো আছে। এই মামলার কারাবন্দী আসামি দিনার জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে এখনো আছেন। দলীয় পদে থাকায় তার পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়েও তার ভয় আছে।

 পলাতক প্রধান আসামি আবদুর রকিব পালিয়ে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি। আমরা শুনেছি, যুক্তরাজ্য থেকে রকিব বিভিন্নভাবে মামলাটির বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টায় আছেন।

পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে দবির আলী বলেন, ‘পলাতক আসামিরা বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করার নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। পলাতক প্রধান আসামি আবদুর রকিব পালিয়ে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি। আমরা শুনেছি, যুক্তরাজ্য থেকে প্রধান আসামি রকিব বিভিন্নভাবে মামলাটির বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টায় আছেন।’