নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০১:০৯

ওসমানী হাসপাতাল: তিনবার উদ্বোধনের পরও চালু হয়নি আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট

নয় বছর আগে নির্মান কাজ শেষ হয়েছিলো ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিটের। এই নয় বছরে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়েছে তিন বার। তবে এখন পর্যন্ত চালু হয়নি এই ইউনিট। নয় বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে সিলেটের বৃহৎ এই চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র।

জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ ওসমানী হাসপাতালের ‘আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট’ ভবনের নির্মান কাজ শুরু হয়। ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় তিনতলা এই ভবনটি। ভবনের ভেতরে আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটির যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হয় আরও প্রায় এক কোটি টাকা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পেছনে ত্রিকোণ আকৃতির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুরম্য এ ভবনটি নির্মান কাজ শেষে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান উদ্বোধন করেন। মহাজোট ক্ষমতাসীন হলে ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এটি দ্বিতীয় দফায় উদ্বোধন করেন। এরপর গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ওসমানী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে ফের উদ্বোধন হয় আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিটের। তিনবার উদ্বোধনের তিনটি পৃথক ফলক সাটানো রয়েছে ভবনটির দেয়ালে।

আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফা উদ্বোধনের পর প্রতিস্থাপন করা যন্ত্রপাতি পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় চালু করা যায় নি এ ইউনিট। লোকবল না থাকায় মূল হাসপাতালের নিচতলার একটি ওয়ার্ডে আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট পরিচালিত হচ্ছিল। লোকবল বরাদ্দ ত্বরান্বিত করতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিতয়ে ৩য় দফা উদ্বোধন করানো হয়। উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন। তবে এখন পর্যন্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয় নি।

এ ব্যাপারে ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আবদুস ছালাম বলেন, লোকবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন আছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এটি চালু করা হবে।

নির্মাণের প্রায় আট বছর পরও চালু না হওয়া প্রসঙ্গে উপপরিচালক বলেন, ‘কিছু লোকবল ও সরঞ্জামের অভাব ছিল। শিগগিরই এগুলো পূরণ হবে। এরপর পুরো কার্যক্রম শুরু হবে।’

তখন আবার উদ্বোধন হবে কি না জানতে চাইলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এদিকে, নির্মান কাজ শেষ হওয়ার নয় বছর পর আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট চালু না হওয়ায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই হাসপাতালে আসা রোগীদের। বিশেষত মূমূর্ষ রোগীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে এই ইউনিটের যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় এর অনেকগুলোই বিকল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘আইসিইউ ও ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট’র ভবনটির বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। ভবনের ফটকে ঝুলানো রয়েছে তালা। ফটকের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এম্বুলেন্স। ভবনের দেয়াল ও ছাদে দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি ফাটল। যার কারণে ছাদ থেকে পানি চুইয়ে নিচতলা পর্যন্ত পৌঁছায়। সম্প্রতি এ ভবনের ছাদ থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার তারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও চুরি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।

ভবনে ফাটল ধরার ব্যাপারে এই ভবনের নির্মাণকাজ তদারককারী গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী রফিক উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

এই ইউনিট ব্যাপারে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আব্দুস সবুর মিঞার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত