নিজস্ব প্রতিবেদক ও জুড়ী প্রতিনিধি:

০৯ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:০২

জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে: জুড়ীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, ‘আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, স্বপ্ন দেখছি; তাদেরকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদক যে ভয়ঙ্কর নেশা, এটা যে একটা সমাজকে, পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় এটা মানুষকে বুঝাতে হবে। শুধু কঠোর হলেই মাদক বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে বুঝিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যেমন করে আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। মাদকের হাত থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলব।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সাথে আমাদের সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।’ 

শনিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী থানা প্রাঙ্গণে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। মন্ত্রী সেখানে জুড়ী থানার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন এবং ‘একটি আধুনিক থানার জন্মকথা’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অনেক অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যেদিন রাজারবাগ পুলিশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশগ্রহণ। ঘন্টার পর ঘন্টা মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের কথা বললে শেষ হবে না। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি সেখানে পুলিশ বাহিনীর দুই একজন সাথে থাকতেন। থানা থেকেই আমরা অস্ত্র পেয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময়। কাজেই পুলিশের বাহিনীর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক অনেক ইতিহাস রয়ে গেছে।’

‘‘৭৫ সালে রাজারবাগে ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আহ্বান করেছিলেন, তোমরা জনগণের পুলিশ, তোমরা মানবতার পুলিশ। তোমাদেরকে নিয়ে যেন গর্ব করতে পারি। আজ কিন্তু আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটাতে আসছে।’’

পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘আজ থেকে বারো বছর আগের যে পুলিশ আর আমাদের পুলিশ এক নয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন নেতৃত্বে। তিনি জনগণের পুলিশ হওয়ার জন্যই এই পুলিশকে তৈরি করেছেন। আজকে জনগণের যা প্রয়োজন পুলিশ সর্বাগ্রে সেখানে উপস্থিত। জঙ্গি দমন বলেন, বনদস্যু দমন বলেন, সন্ত্রাস দমন বলেন, সব জায়গায়ই পুলিশ আজকে তাদের দক্ষতায় সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা কিছু করেন ৫০ বছর পরের চিন্তা করেই করেন। ৫০ বছর পরে কি ডিমান্ড হবে বাংলাদেশের, কোথায় যাবে বাংলাদেশ- এই চিন্তা করে পুলিশের জনবল, সক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণসহ অবকাঠোমো সকল কিছুর উন্নয়ন করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ শুধু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে না। মানবিক কাজ করছে। তারা কোভিডের সময় এর সাক্ষর রেখেছে। যখন সন্তান তার মাকে হাসপাতালে ফেলে এসেছে, লাশের কাছে যায়নি; পুলিশই তখন প্রথম এগিয়ে এসে দাফন কাফন করেছে। কোভিডের সময় পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করে মানবতার সেবার দাঁড়িয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা কোভিড মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।’

‘‘যখন সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু পথ হারায়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পথ হারাইনি বলে এই মহামারি আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি। ফলে কৃষি শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।’’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে। তাই দেশের অগ্রযাত্রা কোনো অপশক্তি রুখতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের যড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।’

প্রবাসে অবস্থানকারীদের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ার কথা উল্লেখ করে সমস্যা নিরসনের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সুদর্শন কুমার রায়ের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, সংরক্ষতি নারী আসনের (মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ) সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, জুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেন প্রমুখ। 

এরআগে মন্ত্রীদ্বয় জুড়ী থানা প্রাঙ্গণে ফলক উন্মোচন করে নবনির্মিত থানার ভবনের উদ্বোধন করেন। এরপর সেখানে গোলাপ ও কামিনীবৃক্ষের চারা রোপণ করেন। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ নেতারা দুই মন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত