বিশ্বনাথ প্রতিনিধি

৩১ জুলাই, ২০২২ ১২:১৫

ছাত্রলীগকর্মী বাছিত হত্যাকারীদের ধরছে না পুলিশ, মায়ের অভিযোগ

সিলেটের বিশ্বনাথে ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল বাছিত (২৫) হত্যা মামলার আসামিরা আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলও বাকিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। কিন্তু তারপরও ওই আসামিদের গ্রেপ্তার করছেনা পুলিশ। এমনকি মামলার চার্জশিটেও মুল অভিযুক্তদের বাদ দেওয়ার পায়তারা করছেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা।

সংবাদ-সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে এমন নানা অভিযোগ তুলে ধরেন নিহত ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল বাছিতের মা আনোয়ারা খাতুন। তিনি উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা টিল্লাপাড়া গ্রামের মৃত আপ্তাব মিয়ার স্ত্রী।

শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে পৌরশহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষকলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ বুরহান আহমদ রুবেল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্বনাথের চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা আবদুল বাছিত খুনের ঘটনায় দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সকল আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিএনপি-জামাতের দোসর, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ওই আসামীগণ ধনে-জনে বলিয়ান। প্রধান আসামী সুমন মিয়ার ভাই হিরন মিয়া ও লিটন সৌদি আরবে, শিপন যুক্তরাজ্যে, লিপন ফ্রান্সে এবং অপর আসামী ফারুকের ভাই মারুফ ও আসামী সামাদ-কাইয়ুমের ভাই আকিব কাতারে থাকায় তারা টাকার জোরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে ফেলেছে। তিনি এখনও পর্যন্ত মামলার বাদী ও স্বাক্ষীগণকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেননি। আসামীগণকে মামলা হতে বাদ দিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। মামলায় মিথ্যা আসামী দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাদীকে তিনি হুমকিও দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, মামলার আসামী সামাদ মিয়া, কাইয়ুম মিয়া, আহাদ মিয়া প্রতি রাতেই ১২টা-১টার দিকে দিকে বাড়িতে ফিরে নিজেদের ঘরেই রাত্রিযাপন করছে। পাশাপাশি, মামলার চার্জশীট থেকে তাদের নাম বাদ পড়বে-এমন দম্ভ দেখিয়ে ওই আসামীরা প্রকাশ্যেই মামলার বাদী ও নিহত ছাত্রলীগ নেতা বাছিতের বড় ভাই শাহীন মিয়াকে হুমকি দিয়ে আসছে।

লিখিত বক্তব্যে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা বাছিত খুনের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রুমেন আহমদকে পরিবর্তন করে অন্য কোনো সংস্থার দ্বারা তদন্ত কাজ করা, মামলার বাকী ৩ আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সব আসামীর নাম চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করা। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেওয়া হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।

তবে, নানা অভিযোগ আনা হলেও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই রুমেন আহমদ তার উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানুয়াট বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, যেহেতু মমলাটি এখনও তদšাধীন রয়েছে। সেহেতু সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করার পর তদন্তে প্রমানিত অভিযুক্তদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী ও নিহত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল বাছিতের বড় ভাই শাহীন মিয়া, বড় বোন রোজিনা বেগম, সুজিনা বেগম, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদরুল আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রুকন, জাকির হোসেন মামুন, শিপন আহমেদ, কয়েস আহমেদ, সামি, জীবান, জুয়েল আহমেদ, সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেওে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল রাতে প্রতিবেশি সুমন মিয়ার ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল বাছিত নিহত হন। ঘটনার একদিন পর ১৭ এপ্রিল রাতে নিহতের বড়ভাই শাহীন আহমদ বাদী হয়ে বিশ^নাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ১৩)। মমালায় সুমন মিয়াকে (২৭) প্রধান আসামিসহ আসামি করা হয় সুমনের সহযোগী ফারুক মিয়া (২৫), সামাদ মিয়া (২৬), কাইয়ূম মিয়া (৩৮), আহাদ মিয়াকে (৫০)। এছাড়া আরও বেশকয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। তবে, সুমন মিয়া ও ফারুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলেও ঘটনার সাড়ে ৩মাসেও আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত