ওসমানীনগর প্রতিনিধি

০৭ আগস্ট, ২০২২ ১৪:২৫

সড়কে দেয়াল, ২০ দিন ধরে গৃহবন্দী ৩ পরিবার

সিলেটের ওসমানীনগরে বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তায় প্রভাবশালী কর্তৃক পাকা দেয়াল নির্মাণ করায় ২০ দিন ধরে তিনটি পরিবারের সদস্যরা গৃহবন্দি থাকার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শরিষপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, শরিষপুর গ্রামের প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগিরা রাতের আধাঁরে রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে তিনটি পরিবারের ৩০ জন মানুষের চলাচলে বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গত ২ আগষ্ট ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানার নিকট একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, শরিষপুর গ্রামের বসত বাড়িতে কয়েক পুরুষ থেকে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন আব্দুল মতলিব, আব্দুল মালিক, মাওলানা আব্দুল গফুর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সোয়ার গাওঁ-সরিষপুর-সৎপুর বাজার এলজিইডির রাস্তা থেকে ভোক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ির যানবাহনসহ চলাচলের একমাত্র রাস্তা। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই সড়কে মাটি ভরাট করে ইটসলিং কাজও করানো হয়।

অভিযোগ থেকে আরও জানা যা্য়, এলাকার প্রভাবশালীদের সহায়তায় ১৬ জুন রাতের আধাঁরে রাস্তার মধ্যস্থলে প্রায় ২৫ হাত জায়গার মাটি কেটে পাশ্ববর্তী তাদের পুকুরে ফেলে দিয়ে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী করে তুলে। গত ১৮ জুলাই প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগিরা রাতের আধাঁরে ভোক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার ওই রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি সম্পন্নরূপে বন্ধ করে দেয়। পরের দিন সকালে ভোক্তভোগীরা গৃহবন্দি করে রাখার কারন জানতে চাইলে দুদু মিয়াসহ তার সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে তিনভাইসহ পরিবারের সদস্যদের এলোপাতারি পিটিয়ে মারাত্বক ভাবে আহত করে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ওসমানী হাসপাতালে প্রেরন করেন।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল রফিকূল ইসলামের নিদের্শে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুৎফুরসহ তার দুই সহযোগীদের আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে রাস্তায় দেয়াল নির্মানের দোষ স্বীকার করে মুসলেকার মাধ্যমে দুইজন ও ধৃত লুৎফুর আদালতের মাধ্যমে জামিনে বেড়িয়ে আসেন।

তবে এরপর থেকে ভোক্তভোগীদের শুধু গৃহবন্দি করে রাখা নয়, তিন ভাইকে মিথ্যা মামলায় জেল কাটাবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগকারী আব্দুল মুতলিব জানান, চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকায় আজ ২০ দিন যাবত আমরা গৃহবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় বিশেষ করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ও মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। এবং পরিবারের অসুস্থ লোকজনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। খুব বিপদে আছি আমরা দিন আনি দিন খাই। তারা প্রভাবশালী তাই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায় না। আমাদেরকে গৃহবন্দির করে রাখার বিষয়ে গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি প্রভাবশালী মিজানুর, দুদু ও লুৎফুরদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো সদউত্তর না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে প্রানে মারাসহ জানমালের ক্ষতি সাধনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয়ে আমরা গৃহবন্দি হয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমতাবস্থায় গৃহবন্দি মুক্ত হতে বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তায় প্রভাবশালীর জোরপূর্বক নির্মিত দেয়ালটি অপসারন করে চলাচলের রাস্তা সুগম করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানচ্ছি।

অভিযুক্ত দুদু মিয়া বলেন, আমি কারো রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করিনি। প্রতিপক্ষ অযথা আমাদেরকে হয়রানি করছে বিভিন্ন মামলা দিয়ে।

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মো: রফিকূল ইসলাম বলেন, রাস্তায় পাকা দেয়াল নির্মাণ করে তিনটি পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখার ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। আটককৃতরা দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যৎতে এমন ঘটনা করবে না বলে পুলিশের কাছে মুসলেকা দিয়েছে। এর পরও যদি ওরা রাস্তার দেয়াল অপসারন না করে তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  
 
দয়ামীর ইউপি চেয়ারম্যান তাজ মো:  ফখর উদ্দিন বলেন, ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জেনেছি। দু-পক্ষকে ডেকে ইউএনও সাহেব বিষয়টির মিমাংসার চেষ্টা করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত