নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ আগস্ট, ২০২২ ১১:২৫

অবহেলিত গণকবরে পঞ্চাশ বছর পর স্মৃতিস্তম্ভ

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া অনেককে গণকবর দেওয়া হয় সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার পুলিশ লাইনসের ভেতরে। এতো্দিন অরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিলো এ গণকবরটি। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর এবার এই স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।

রোববার 'স্মৃতি ৭১' নামের এই স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের প্রচেষ্টায় ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে এটি স্থাপন করা হয়। স্মৃতি ৭১ এর নকশা করেছেন স্থপতি রাজন দাশ।

স্থপতিা রাজন দাশ বলেন, আবহমানকাল ধরে এ বাংলার মৃত্যু পরবর্তী যে লৌকিকতা চর্চিত হয়ে আসছে, অর্থাৎ মাটির মানুষ মাটিতেই ফিরে যাবে, মাটিতেই রচিত হবে তার কবর, গোর বা সমাধি; সেই সমাধি বা কবরের একটি লোকস্থাপত্যধারা লক্ষ্য করা যায়- এই গণকবরের উপর নির্মািত স্থাপত্যধারাটি সেই ধারাতেই অনুপ্রাণিত।

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন অনেকে। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযােদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষকে গণকবর দেওয়া হয় শহরের রিকাবিবাজার এলাকার পুলিশ লাইনসের ভেতর। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো স্মৃতিস্তম্ভ।

বীর মুক্তিযােদ্ধা ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী- মুক্তিযুদ্ধের পরপরই গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়। রিকাবিবাজারের পার্শ্ববর্তী মুন্সিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বীর মুক্তিযােদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে এসব শহীদের মরদেহ এনে স্বজন ও পরিচিতজনেরা পুলিশ লাইনসের ভেতরে একটি ডোবায় গণকবর দেন। কতজনকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে, এমন সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত না থাকলেও গণকবর দেওয়া আটজন শহিদের নাম-তথ্য জানা গেছে। তারা ওইসময় পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক আবদুল লতিফ, হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, কনস্টেবল মােক্তার আলী, শহর আলী, আবদুস ছালাম, মাে. হানিফ ব্যাপারী, মনিরুজ্জামান ও পরিতােষ কুমার।

এসব পুলিশ সদস্য ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল জিন্দাবাজার এলাকার তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকে (বর্তমানে সােনালী ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাংকের টাকা লুটের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে। পরে ৬ এপ্রিল এসব শহিদকে পুলিশ লাইনসে গণকবর দেওয়া হয়। এর বাইরে শহরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ অনেককেও এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।

রবিবার জেলা পুলিশ লাইন্সে এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম ও সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, দেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেও এ সৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত