বিশেষ প্রতিনিধি

১৩ আগস্ট, ২০২২ ০১:১০

দুর্বলের উপরেই বারবার আক্রমন: চা শ্রমিক ইউনিয়ন

চলমান আন্দোলন শ্রম আইন পরিপন্থী: অধিদপ্তর

দেশের সকল চা বাগানে আজ শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবীতে এই ধর্মঘটের ডেকেছে সংগঠনটি।

ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যয় চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনায় বসে, এতে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় আমরা আজ শবিনার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশের ২৩২ টি চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাচ্ছি। পাশাপাশি চা শ্রমিকরা শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধও করবো।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নিপেন পাল জানান, গত ৩ আগস্ট আমরা চা বাগানের মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য ১ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম কিন্তু তারা সেটাতে কর্ণপাত করেননি। এর প্রতিবাদে আমরা গত চারদিন ধরে সারাদেশের সকল চা বাগানে দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছি। তারপরও মালিকপক্ষ আমাদের দাবী মেনে না নেওয়ায় আমরা ধর্মঘটের মত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।

এদিকে চলমান এই সমস্যা সমাধানের জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের মৌলভীবাজারস্থ কার্যালয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালকের আমন্ত্রনে মালিকপক্ষ ও চা শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে সমজোতা বৈঠকের আয়োজন করা হয়  কিন্তু সেই বৈঠকে চা বাগানের মালিকপক্ষের কেউ আসেননি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী জানান, আমরা শ্রমিকদের  দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা মজুরি থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি করছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমঝোতা বৈঠকের জন্য আমাদের শ্রমকল্যাণ দপ্তরে ডাকা হয়। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম শ্রমকল্যাণ দপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের ২৮ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। কিন্তু আমাদের শ্রমিকেরা সেটা মানবে না। তাছাড়া মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে ছিলেন না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম  বলেন, ‘কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা আন্দোলনে গেলে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠক করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৮ আগস্ট তাদের সঙ্গে বসতে সময় চেয়েছেন। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সেটা মানেনি।’

এদিকে এই বিষয়ে চা বাগান মালিকপক্ষের বক্তব্য জানতে বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে চলমান এই অচলাবস্থা নিরসনে উভয়পক্ষকে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের শ্রম অধিদপ্তর।

শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনকে শ্রম আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, চা শিল্পের ভরা মৌসুমে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং চা শিল্পের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রচলিত প্রথা মেনে উভয়পক্ষকে বৈঠকে বসে মজুরি নির্ধারন করার বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

তবে শ্রম অধিদপ্তরের দেওয়া এই চিঠির তীব্র বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নিপেন পাল।

তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকরা দুর্বল তাই আমাদের এভাবে একটার পর একটা চিঠি দিয়ে চাপে রাখা হচ্ছে। অথচ বাগান মালিকদের ব্যাপারে তারা কোন ধরনের সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবারও বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে সমঝোতা বৈঠক হয়েছিলো সেখানেও বাগান মালিকরা ছিলেন না।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের ব্যাপারে তিনি বলেন, শ্রম আইন যদি কেউ ভঙ্গ করে থাকে তবে সেটা মালিকপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যে নতুন করে চুক্তি করতে হবে কিন্তু ১৯ মাস পেরুনোর পরও মালিকপক্ষ নতুন করে চুক্তি করেনি। তাই আমরা আজ শনিবার থেকে সারাদেশের সকল বাগানে ধর্মঘট এক প্রকার বাধ্য হয়েই ডেকেছি, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত