নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০২২ ১৫:৩৭

১২০ টাকা দিয়ে সংসার চলবে কি করে?

এক কেজি চালের দাম এখন ৭০ টাকা। পেট্রলের লিটার ১৩০ টাকা। অথচ আমরা সারাদিন খেটে মাত্র ১২০ টাকা পাই। এই বাজারে ১২০ টাকা দিয়ে সংসার চলবে কি করে?- বললেন সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক রবি গোয়ালা।

রবির মতো একই প্রশ্ন মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক রতন বাউরিরও। তিনি বলেন, ১২০ টাকা দিয়ে এখন চাল-ডালও কেনা যায় না। মাছ-মাংস তো আমরা খেতেই পারি না। আজহকাল সবজিও কিনতে পারছি না। আর সংসারের বাকি খরচ তো রইলোই।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না। আমরা কি মানুষ না?

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে সারাদেশের ১৬৭ বাগানে ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু হয়।ধর্মঘট পালনকালে শনিবার বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভও করেন শ্রমিকরা। নগরের বিমানবন্দর সড়কের লাক্তাতুরা চা বাগানের সামনে বিক্ষোভকালে আলাপ হয় রবি গোয়ালা ও রতন বাউরির সাথে।

সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু করেন চা-শ্রমিকরা। ফলে সবগুলো বাগানেই বন্ধ রয়েছে পাতা তোলাসহ সবধরণের কার্যক্রম।

সিলেট ভ্যালির আন্দোলনরত শ্রমিকরা সকাল থেকে লাক্কাতুরা এলাকায় বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে শ্রমিকরা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে দেন। প্রায় আধাঘন্টা পর পুলিশ গিয়ে সড়ক শ্রমিকদের সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করে।

এরপর চা শ্রমিকরা মিছিল সিলেট নগরে চলে আসেন। নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এসে অবস্থান নেন তারা।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফলে  শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।

রাজু গোয়ালা আরও বলেন, ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি এগুলো চলবে।’

এই চা শ্রমিক নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কী হয়। মালিকপক্ষ বলে, তারা শ্রমিকদের রেশন দেয়। কী রেশন দেয়? শুধু আটা দেয়। আমাদের এগ্রিমেন্টে বলা আছে যে ছয় মাস চাল, ছয় মাস আটা দেবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও রাখেন না। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে খাবার, চিকিৎসা, বাচ্চাদের লেখাপড়া কিভাবে সম্ভব?

চা শ্রমিক নেতাদের সাথে আলাপকরে জানা যায়, ২০২০ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে মালিকপক্ষ। প্রতিবছর মালিকদের সংগঠন চা সংসদ ও শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে মজুরি বাড়ানোর চুক্তি থাকলেও ২০২০ সালের পর আর বাড়েনি।
চলতি বছরে এই দুই সংগঠনের মধ্যে কয়েকদফা বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ মজুরি ১৪ টাকা বাড়নোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু চা শ্রমিক নেতারা তা মেনে ৩০০ টাকা মজুরি করার দাবি জানান।

 শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন,  ৩ আগস্ট আমরা মালিকপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে মজুরি বকাড়ানোর দাবি জানাই। এজন্য সময়সীমাও বেধে দেই। কিন্তু তারা তা না মানায় আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।

একই তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নিপেন পাল জানান, আল্টিমেটামে কাজ না হওয়ায় আমরা গত চারদিন ধরে সারাদেশের সকল চা বাগানে দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করি। তারপরও মালিকপক্ষ আমাদের দাবী মেনে না নেওয়ায় আমরা ধর্মঘটের মত কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে বাধ্য হয়েছি।

এদিকে এই বিষয়ে চা বাগান মালিকপক্ষের বক্তব্য জানতে বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

শ্রম দপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম  বলেন, কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা আন্দোলনে গেলে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠক করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৮ আগস্ট তাদের সঙ্গে বসতে সময় চেয়েছেন। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। কিন্তু চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সেটা মানেনি।

এভাবে ভরা মৌসুমে হুট করে ধর্মঘট ডাকা আইন পরপন্থী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত