নিজস্ব প্রতিবেদক:

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:০১

বানিয়াচংয়ে তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

সাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী ও ভ্রমণকাহিনী লেখক রামনাথ বিশ্বাসের হবিগঞ্জের বাড়ি দখলের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এক দল সাংবাদিক।

হামলার শিকারদের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর ছাড়াও রয়েছেন বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজা।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বানিয়াচং উপজেলার ২ নম্বর ইউনিয়নে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ির সামনেই এই হামলা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।

সাংবাদিকরা বলছেন, ‘দখলদার’ ওয়াহেদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এই হামলায় চালান।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাটি তারা শুনেছেন, তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

ওয়াহেদ মিয়া ওই বাড়িটি দখল করে আছেন বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান (ধন মিয়া) জানিয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজীব নূর বলেন, “রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি অনেক দিন ধরে দখল করে রেখেছেন ওয়াহেদ মিয়া ও তার পরিবার। এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমার সঙ্গে থাকা মোশাহেদ নিজের পরিচয় দিয়েই ওয়াহেদ মিয়ার সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করছিলেন। ওই সময় আমি রামনাথ বিশ্বাসের ঘরের একটি ছবি তুলি।

“ছবি তোলার পরপর ওয়াহেদ মিয়া চড়াও হন এবং জানতে চান, ‘ছবি তুললেন কেন?’ আমরা আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার এক পর্যায়ে উনার ছেলে ওয়ালিদ সেখানে আসে এবং হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়।”

তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে ওয়ালিদের সঙ্গে আরও কয়েক যুবক যুক্ত হয় এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। এর মধ্যে আলমগীর ও তৌহিদকে বেধড়ক পিটিয়েছে ওরা।”

হামলার বিষয়ে ওয়াহেদ মিয়া বলেন, “আমাদের বাড়িতে এসে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলায় কথা কাটাকাটি হয়। আমরা কোনো হামলা করিনি।”

বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন ওয়াহেদ মিয়া।

তবে ২ নম্বর বানিয়াচং ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান বলেছেন, “উনি (ওয়াহেদ) একজন দখলদার। আর এটা রামনাথ বিশ্বাসেরই বাড়ি, তিনি দখল করে রেখেছেন। অনেক সময় চেষ্টা করে বাড়িটি দখলমুক্ত করা করা সম্ভব হয়নি।”

সাংবাদিকদের কাছে ঘটনাটি শুনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন ইউপি চেয়ারম্যান।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে বলেন, “সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।”

হামলায় আহতরা বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় বানিয়াচং থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান রাজীব নূর।

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর বাড়িটিতে গিয়ে হামলার শিকার হন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি কাজল সরকার, দেশটিভির প্রতিনিধি আমীর হামজাসহ চার সাংবাদিক।

দুই চাকায় বিশ্ব দেখা বাঙালিদের অনুসরণীয় একজন রামনাথ বিশ্বাস। সাইকেল নিয়ে কয়েক দফায় পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে বাংলা ভাষায় লিখেছেন ভ্রমণবিষয়ক প্রায় ৩০টি বই।

১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বানিয়াচং ‍উপজেলার বিদ্যাভূষণপাড়ায় রামনাথ বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেন। শেষ জীবনটা কলকাতাতে কেটেছে তার। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর সেখানে মারা যান তিনি।

ডিআরইউর নিন্দা

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য রাজীব নূরের উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার এক বিবৃতিতে ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সংবাদ সংগ্রহের জেরে সাংবাদিকের উপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ এক বিবৃতিতে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সংবাদ সংগ্রহের করার সময় সাংবাদিকের উপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

বিবৃতিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত