ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ::

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৪৩

কাঠইর-জামালগঞ্জ সড়ক এখন মরন ফাঁদ

দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকাবাসীর

সুনামগঞ্জ সদরের কাঠইর এলাকা থেকে জামালগঞ্জ উপজেলা সদর। মাঝখানে শান্তিগঞ্জ উপজেলা। তিন উপজেলার সংযোগের ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এখন প্রায় চলাচল অনুপযোগী। মরন ফাঁদ বললেও অত্যুক্তি হবে না।

তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ আর শত-সহস্র যানবাহন প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত চলাচল করে এ রাস্তায়। রাস্তাটি ব্যবহার করে জামালগঞ্জ, সাচনা বাজার, জয়নগর বাজার, নোয়াগাঁও বাজার, মোহনপুর, সুনামগঞ্জ জেলা শহর, সিলেট বিভাগী শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।

বাণিজ্যিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন অত্রাঞ্চলের যাত্রী সাধারণ। সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়া, রাস্তার মাঝখানে গর্ত হওয়া কিংবা রাস্তার বেশির ভাগ অংশে ঢালাই না থাকায় সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাস্তাটি থেকে  পরিবহণ শ্রমিকরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রমশ। ভাঙা রাস্তার কারণে অনেক চালক রাস্তা বদল করে অন্য রাস্তায় যানবাহন চালাচ্ছেন। প্রায় দ্বিগুন করেছেন ভাড়াও। এতে আরো দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামালগঞ্জ-কাঠইর রাস্তার দ্রুত সংস্কারের দাবিতে জয়নগর বাজার-সর্দারপুর পয়েন্টে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলামের পরিচালনায় মানববন্ধনে যুব ও ছাত্রসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রাস্তা দ্রুত সংস্কার করা না হলে আরো বড় ধরণের কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানানো হয় মানববন্ধনে।

সরেজমিন ঘুরে কাঠইর-জামালগঞ্জ রাস্তার বেহাল দশা দেখা যায়। রাস্তার শুরুতে কাঠইর পয়েন্টেই রাস্তার মাঝখানে দেখা মিলে বড় গর্তের। পানি জমে ছোটখাটো একটা পুকুরের মতো তৈরি হয়েছে রাস্তায়। তারেক স’মিল, চন্ডিটিয়র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের অংশ, একই এলাকার ব্রিজের পূর্ব এবং পশ্চিমাংশ, নারিকিলা পয়েন্টের পূর্বাংশ, শাখাইতি-হুসেননগর এলাকার রাস্তার দশা বেহাল দেখা যায়। সম্পূর্ণ রাস্তাই ভাঙা। গর্তে ভরপুর। হুসেন নগরের ব্রিজের পশ্চিমাংশ থেকে জয়নগর বাজার-সর্দারপুর পয়েন্ট পর্যন্ত সম্পূর্ণ রাস্তায় ভাঙা আর গর্তে ঠাসা।

এস্থানে বন্যার আগে সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র পক্ষ থেকে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কিছুটা খুঁড়াখুঁড়ি করে রাখলেও বন্যা পরবর্তীতে আর কাজ শুরু হয়নি। জয়নগর বাজার-সর্দারপুর পয়েন্ট থেকে সাচনা বাজার পর্যন্তও রাস্তার এমন বেহাল দশা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের জন্য আমাদের এলাকায় ইতোমধ্যে একটি মানববন্ধন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দিরাইর রাস্তার মুখে আরেকটি মানববন্ধন হওয়ার কথা আছে। আমাদের সকলের একটাই দাবি, কাঠইর-জামালগঞ্জের রাস্তাটি যেনো দ্রুত সংস্কার করা হয়।

হুসেননগর গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি মো. আবদুল হেকিম, নোয়াগাঁও গ্রামের মো. মহির উদ্দিন, মো. বায়জিদ বলেন, রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার দাবি করছি। যে কোনো সময় রুগী নিয়ে যেতে আমরা চরম ভয় পাই। গর্ভবতী মহিলা নিয়ে যেতে হলে তো চিন্তার শেষ থাকে না। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে  জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

জয়নগর বাজার-সর্দারপুর পয়েন্টের পরিবহণ শ্রমিক মঈন উদ্দিন, লেগুনা চালক শামীম মিয়া, মোটরসাইকেল চালক রুপন আহমদ ও অটোচালক রমিজ আলী বলেন, ভাড়া কী আর আমরা স্বাদে বাড়িয়েছি? একবার আপ-ডাউন (আসা-যাওয়া) করলে গাড়িতে কাজ করাতে হয়। রাস্তা যেভাবে ভাঙছে, এভাবে চলতে থাকলে এ রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে অধিকাংশ যানবাহন এ রাস্তা থেকে সরে গেছে। গাড়ি কম, যাত্রী বেশি, ভাঙা রাস্তা সব মিলিয়ে সামান্য সময়ের জন্য ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তা ঠিক হয়ে গেলে সরকার  নির্ধারিত ভাড়াতেই আমরা গাড়ি চালাবো।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি শামসুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি বলেন, রাস্তা পরিদর্শন করে আপনি সুস্থ আছেন কি না? রাস্তার যে দশা আপনি তো সুস্থ্য থাকার কথা না। তিনি বলেন, আমরা যারা এ রাস্তায় চলাচল করি তাদের অবস্থা তো শেষই। যদি কোনো রোগীকে এ রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সে রোগী রাস্তাতেই মারা যাবেন। গর্ভবর্তী মহিলা হলে তো কথাই নেই। রাস্তায় প্রসব হবে। দু’একদিনের মধ্যে আমার ইউনিয়নবাসী দিরাই রাস্তার মুখে এসে রাস্তা সংস্তারের দাবিতে মাববন্ধন করবেন বলে একটি খবর আমার কাছে আছে। আমাদের সর্বস্তরের মানুষের দাবি, দ্রুত সম্পূর্ণ  রাস্তাটি যেনো সংস্কার করে দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, কাঠইর-জামালগঞ্জ রাস্তার ব্যপারে আমরা পূর্ব থেকেই অবগত। ইতোমধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করে আমরা আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তার  কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। চেষ্টা করা হচ্ছে বিদেশি অর্থায়নে রাস্তাটি সংস্কার করার। আমাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ২৭ কিংবা ২৮ তারিখ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা রাস্তাটি পরিদর্শনে আসছেন। কবে নাগাদ রাস্তা সংস্কারের প্রকল্পের অনুমোদন হবে এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে, আগামী হেমন্তের আগে আসতে পারে এমনটাই আশা করছি। বন্যার আগে একটা গ্রুপ কাজ করেছিলো, বন্যায় সব ওয়াস আউট হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত