কুলাউড়া প্রতিনিধি

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:১৩

ধর্ষণের ঘটনা শালিসী বৈঠকেে ‘নিস্পত্তি’, ১৫ দিন পর কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বাড়ির পাশ থেকে এক কিশোরীর (১২) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ উপজেলার পৃথিমপাশার একটি বাড়ির পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
 
ওই কিশোরীর বাবা-মায়ের অভিযোগ, দাবি ১৫ দিন আগে তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে স্থানীয় বাসিন্দা সুরমান মিয়া (২৫)। পরবর্তীতে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফের ধর্ষণ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

কিশোরীর মূল বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে। ৪ মাস ধরে তার বাবা-মা কুলাউড়ার উপেজেলার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেন।

পুলিশ ও কিশোরীর পিতার ভাষ্যমতে জানা যায়, সোমবার রাত ১২টার দিকে কিশোরী মায়ের সাথে ঘুমাতে যায়। সাড়ে তিনটার দিকে মা ঘুম থেকে ওঠে দেখেন তার মেয়ে ঘরে নেই। এ সময় কিশোরীর বাবা-মা দেখতে পান, ঘরের জানালা খোলা এবং জানালার ওপর বিস্কুট ঝুলানো রয়েছে।

অনেক খোঁজাখুজি করার পর সকাল ৯টার দিকে তাদের ঘরের পিছনে গলায় ওড়না পেঁচানো ও মাটিতে উপুড় অবস্থায় মেয়ে দেহ পরে থাকতে দেখতে পান। এ সময় মেয়ের নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। পরে খবর পেয়ে দুপুরে কুলাউড়া থানার উপ পরিদর্শক মো. হারুনুর রশীদ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।

কিশোরীর বিকেল সাড়ে ৪টায় এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে তার মেয়েকে আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা আইসক্রিম বিক্রেতা সুরমান মিয়া। সুরমান স্থানীয় ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকনের আইসক্রীম ফ্যাক্টরীতে চাকরি করে।

তিনি বলেন, আমি বিষয়টি থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন ও ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন জোরপূর্বক বাড়ির মালিকের রবিরবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শালিসী বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। বৈঠকে সুরমানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আমাকে দেওয়ার সিদ্বান্ত নেয়া হয় এবং বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে এই মর্মে সাদা কাগজে আমাকে টিপসই দেওয়ার জন্য বলেন ওই দুই ইউপি সদস্য।

কিশোরীর বাবা বলেন, আমি বিষয়টি মানিনি। থানায় অভিযোগ করার চেষ্টা করি। তখন আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখান সুরমান ও কাজল। এর জেরে সোমবার রাতে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে সুরমান ও কাজল আমার মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।

২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় কোন শালিসী বৈঠক করা যায় না। আমি কোন বৈঠকে ছিলাম না।’

তবে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা সত্য নয়। ওই মেয়ে মানসিক রোগী। সুরমান ওই এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি করতে গেলে মেয়েটি তার কাছে আইসক্রীম চায়। এজন্য মেয়েটির মা ও বাবা মিলে সুরমানকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিকের দোকানে স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মতিনসহ আমরা বৈঠক করি।’

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড। থানায় মেয়েটির পিতা বাদি হয়ে সুরমান ও কাজলকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।

ধর্ষণের ঘটনায় শালিসী বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখবো কি ঘটেছিলো ওই বৈঠকে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত