তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)সংবাদদাতা

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০০:৩৫

তাহিরপুরে মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না চাঁদাবাজি

অতিষ্ট সাংবাদিক সমাজ ও এলাকাবাসী

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজরা সাংবাদিক,র‌্যাব ও বিজিবির পরিচয় দিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় সীমান্তের নদীপথ,বাংলা কয়লা থেকে ওপেন চাঁদাবাজি করাসহ ওপেন মদ-গাঁজা,হেরুইন, ইয়াবা ও হুন্ডির ব্যবসা করছে। সেই সাথে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে ধ্বংস করছে যুব সমাজ। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজের চলছে জমজমাট বানিজ্য। এমতাবস্থায় সীমান্তের চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বদ মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে পরপর ২টি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করার পর মামলাগুলো থানায় পাঠানো হয়। কিন্তু মামলা দায়েরের একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলাগুলো এফআইআর করছে না। বরং থানার এক এসআই আজাদকে বোগলদাবা করে এলাকায় ঘুরছে। যার ফলে এলাকার সাধারণ মানুষসহ সাংবাদিক সমাজ তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়,চাঁদাবাজ আজাদ মিয়ার একটি সিন্ডিকেড রয়েছে। এলাকায় সে নিজেকে কখনো বিজিবির সিও, কখনো র‌্যাব আবার কখনো বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে। তার চাঁদাবাজি,সীমান্তে কয়লা চোরাচালান,মাদক ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ অত্যাচারের সত্য সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করার কারণে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে বাদাঘাট বাজার থেকে লোক দিয়ে তার অফিসে তুলে নিয়ে মারধর করে।

পরে নির্যাতিত সাংবাদিক রাজু থানায় জিডি করলে তাকে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে। আজাদের সীমান্তে কয়লা,মদ-গাঁজা ও হেরুইন পাচাঁর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার কাছে ক্ষতি পূরণ বাবদ চাঁদা দাবী করে। না দেওয়ায় তার ওপর হামলা চালিয়ে চ্যানেলের ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে। পরে আদালতে সন্ত্রাসী আজাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে লাঠিয়ান বাহিনী দিয়ে হামলা চালানোসহ ফাঁসিয়ে দেয়া হয় মিথ্যা মামলায়। তাহিরপুর সীমান্তের লালঘাট গ্রামের দিনমজুর কালাম,টেকেরঘাট কাচা কলোনির শহিদ মিয়া ও বানিয়াগাঁও গ্রামের সিরাজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান,সন্ত্রাসী আজাদের কথা মতো কয়লা,মদ-গাঁজা ও হেরুইন পাচাঁর না করায় আমাদেরকে মিথ্যা মামলা ফাঁসিয়ে অনেক কষ্ঠ দিয়েছে। আমরা সন্ত্রাসী আজাদের বিচার চাই। স্থানীয়রা জানায়,আজাদ মিয়া ছিল একজন নীল ভিডিও পর্দশক। পর্ণ ফিল্ম চালানো,মদ,গাঁজা ও হেরুইন সেবন করাসহ মেয়েদের রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। এসব কর্মকান্ডের কারণে এলাকাবাসীর নালিশ শুনতে শুনতে অতিষ্ট হয়ে আজাদ মিয়াকে তার বাবা ত্যাজ্য করে দেন। পরে সে এলাকা ছেড়ে সিলেট চলে যায়। দীর্ঘদিন পর আবার এলাকায় ফিরে এসে সীমান্তে গড়ে তোলে একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট। রাতের আধাঁরে সীমান্তের লাকমা, লালঘাট,টেকেরেঘাট,চানপুর,চাঁরাগাঁও,লামাকাটা,লাউড়েরগড়,বাগলীসহ আরো একাধিক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে অবৈধভাবে হাজার,হাজার কয়লার বস্তা পাচাঁর করে ও সেখান থেকে আবার র‌্যাব,বিজিবি,পুলিশ ও সাংবাদিকদের নামে চাঁদাবাজি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়।

এরপরও ক্ষান্ত হয়নি সে। তার অবৈধ টাকাকে আরো দ্বিগুন থেকে দ্বিগুন করতে শুরু করে হুন্ডি,হেরুইন,ইয়াবা ও জুয়ার ব্যবসা। যা যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ২০০৭ সালের ৬ আগষ্ট স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে প্রশাসনের লোকেরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুষ গ্রহণের সময় (মামলা নং-৩)সেটেলম্যান্ট অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেনকে হাতে নাতে আটক করলে,আজাদ লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায। আজাদ প্রতিমাসে ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫হাজার টাকা হারে নিয়মিত চাঁদা নিত। তার চাঁদাবাজি,ব্ল্যাকমেইল ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে ২০১১সালের ৪ই মে তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ মুজাহিদ উদ্দিন আহম্মদ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ায়,স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ ২০১২ সালের ১১ই এপ্রিল  পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩ই জানুয়ারী আজাদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী করক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলী। এব্যাপারে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বলেন,আজাদ সীমান্তের স্মাগলিং পয়েন্টগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে মাসোহারা,সাপ্তাহিক ও দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছে। আমরা তার প্রতিবাদ করায় আমাদের কাছে চাঁদা দাবী করে। আমরা তার আইনগত বিচার চাই। তাহিরপুর থানার ওসি শহিদুল্লাহ বলেন,আজাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন-আদালতে দায়েরকৃত আজাদের দুইটি চাঁদাবাজি মামলা তদন্ত করা হচ্ছে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত