নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ ২১:৩১

রাজপথে শক্তি দেখাতে চায় দুই দল

পাঁচ বছর পর সিলেটে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি

একইদিনে সিলেটের রাজপথে নিজের শক্তি দেখাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শনিবার দুপুরে নগরের পৃথক স্থানে কর্মসূচী দিয়েছে দুদলই।  এই কর্মসূচীগুলোর মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চায় দলগুলো।

জানা যায়, প্রায় ৫ বছর পর পৃথক কর্মসূচী নিয়ে সিলেটের রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এরআগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মুখোমুখ হয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। ওই দিন খালেদা জিয়ার সাজার রায়কে কেন্দ্র করে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অনেকে। এরপর উভয় দল নানা ইস্যূতে রাজপথে সরব থাকলেও কখনো মুখোমুখি হয়নি।

তবে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী না থাকলেও গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে রাতে নগরের রিকাবীবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

শনিবার ‘বিভাগীয় সমাবেশ’ ও ‘শান্তি সমাবেশে’-এর মাধ্যমে আবার রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। দীর্ঘদিন পর একইদিনে দুইদলের কর্মসূচীর কারণে সংঘাতের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তবে দুইদলের নেতাদের আশা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে সমাবেশ।

‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেপ্ততারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে গত জানুয়ারিতেই সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। শনিবার বেলা ২টায় সিলেট রেজিষ্ট্রারী মাঠে এই সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান।

সমাবেশ সফলে এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটজুড়ে কর্মী সভা,পথসভা, জনসংযোগের মাধ্যমে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এই সমাবেশ সফলে নগরের ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুধু জাতীয়তাবাদী শক্তি নয়, গণতন্ত্রকামী সিলেটবাসীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সূচনা হয়েছে। সিলেটবাসী সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সমাবেশ সফলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

অপরদিকে একই দিনে সিলেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমে এই সমাবেশ বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিস্টারি মাঠে করার ঘোষণা দেয় দলটি। তবে পরে স্থান পরিবর্তন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ৩ টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। শান্তি সমাবেশ সফলেও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় দলটি।  

শান্তি সমাবেশ সফলে বৃহস্পতিকার সন্ধ্যায় প্রস্তুতি সভা করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে স্ব স্ব ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশে অংশগ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
 
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নিসন্ত্রাস রুখে দিতে আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। কোনোভাবেই তাদেরকে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না।

দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী আর ব্যাপক শো ডাউনের প্রস্তুতির কারণে হঠাৎ করেই সিলেটের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে উত্তাপ। উকি দিচ্ছে সংঘাতের শঙ্কাও।

তবে বিএনপি শান্তিুপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চায় জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, সিলেটের রাজনীতিতে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা আশাবাদী এটা কেউ নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। যার যার কর্মসূচি যার যার মতো করে পালন করবেন। তবে কোন প্রতিবন্ধকতা আসলে সেটা জয় করে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশ সফল করবে। আমরা সেরকম প্রস্তুতি নিয়েছি।

বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করলে সংঘাত হবে না জানিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পক্ষে। রাজনৈতিক সহাবস্থানের পক্ষে। তাই আমরা উদারতা দেখিয়ে নিজেদের কর্মসূচীর স্থানও পরিবর্তন করেছি। এখন বিএনপি যদি বিশৃঙ্খলা না কওে তবে আমাদের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে।

দুই দলের পৃথক কর্মসূচীর কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশও। শুক্রবার বিকেল থেকেই নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, নগরের সবগুলো মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নগরের প্রবেশপথগুলোতে পেকপোস্ট বসানো হয়েছে।  কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না যাতে ঘটে এ জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত