নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০৩

ভূমিকম্প ঝুঁকি: সিলেটে বহুতল ভবনে উদ্ধার অভিযানের সক্ষমতা নেই দমকল বাহিনীর

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সিলেট- এটি অনেক পুরনো তথ্য। সিলেটের আশপাশে কয়েটি ফল্ট লাইন (বিচ্যুতি) থাকায় দেশের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল সিলেট। অথচ এমন দূর্যোগের ঝঁকির মধ্যে থাকলেও তা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই সিলেট দমকল বাহিনীর।

সিলেটে রীতিমত প্রতিযোগীতা করে গড়ে ওঠছে বহুতল ভবন। দমকলবাহিনীর অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এসব আকাশছোঁয়া ভবন। প্রতিনিয়ত বহুতল ভবন নির্মিত হলেও সিলেটে দু'তলার চেয়ে অধিক উচ্চতার ভবনে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর সক্ষমতা নেই দমকল বাহিনীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনসহ কয়েকটি এনজিও’র সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে কিছু স্বেচ্ছাসেব তৈরি করা ছাড়া আর কোনো প্রস্তুতিই নেই দমকল বাহিনীর। নেই তাদের সক্ষমতাও। একে তো সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ উপজেলায়ই নেই দমকল বাহিনীর ইউনিট। নেই আধুনিক সরঞ্জামাদিও।

এদিকে, সিলেট ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও নগরীতে ভবন নির্মানে মানা হচ্ছে না কোনো আইন। সড়ক থেকে ৩০ফুট দূরে ভবন নির্মানের কথা থাকলেও দেখা যায় এখানে সড়কের পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। নগরীর সড়কগুলো সংকীর্ণ থাকায় অনেক এলাকায়ই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশেরও সুযোগ নেই। ভবন নির্মানে নীতিমালা না মানার কারনে দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিস্টদের।

জানা যায়, ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ শুধু সেফটি প্ল্যান দিয়ে থাকে। বাকিটা সিলেট সিটি কর্পোরেশন তদারকি করে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের কাজে যেসব বাঁধা-বিপত্তি রয়েছে সেসব চিহ্নিত করে তারা সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশনামা প্রেরণ করেছেন।

সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের মাত্র ১৬টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু আছে। তন্মধ্যে সিলেট জেলার সিলেট সদর উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, জকিগঞ্জ উপজেলা, বালাগঞ্জ উপজেলা, বিয়ানীবাজার উপজেলা সহ ৫টি স্টেশন আছে।

মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার, বড়লেখা উপজেলা, কুলাউড়া উপজেলা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, কমলগঞ্জ উপজেলা সহ ৫টি স্টেশন আছে।
হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জে, মাধবপুর উপজেলা, নবীগঞ্জ উপজেলা, বানিয়াচং উপজেলা সহ ৪টি স্টেশন রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জে, ছাতক উপজেলা সহ ২টি স্টেশন চালু আছে।
এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, ও জগন্নাথপুর উপজেলা এ ৩টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে বটেশ্বর সেনানীবাস, জৈন্তাপুর, দিরাই, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, শাল্লা ও বিশ্বম্বরপুর উপজেলা এ ৬টিতে ফায়ার স্টেশন নির্মান কাজ চলছে।

ভূমিকম্পে উদ্ধার তৎপরতা আর প্রস্তুতি নিয়ে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট বিভাগের উপ পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ন্যায় আমাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে। তবে বড় ধরণের ভূমিকম্প মোকাবেলায় যে ধরণের প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন বা দরকার আমরা তা এই মুহুর্তে পারছি না। আগামী ৫বছরের মধ্যে আমরা প্রস্তুত হতে পারবো।

তিনি বলেন, আমাদের দু’তলা ভবন পর্যন্ত আগুন নেভানোর ক্ষমতা আছে তবে বিকল্প ব্যবস্থায় ১০-১২তলা পর্যন্তও উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। আধুনিক সরঞ্জাম যেমন, হাইলেস লেটার, টার্ন টেবিল লেডার, স্নোরকেল আছে তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ নেই। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত আনুমানিক ২০ফুট উচু একটি গাড়ী সিলেট ফায়ার সার্ভিসের জন্য সরকার বরাদ্ধ দিলেও সিলেটের সংকীর্ণ সড়ক আর ক্যাবল লাইনের জট থাকায় তা আসতে পারছে না। এধরণের উন্নতমানের গাড়ী সাধারণত বিভাগীয় দপ্তরের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা একটি ভাড়া ঘরে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম চালাচ্ছি যেখানে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে কর্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়ে দাঁড়ায়। সিলেট বিভাগীয় অফিসের জন্য আমাদের নিজস্ব ভূমির প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা সিলেট শহরের উপশহর, আম্বরখানা, চন্ডিপুল ও সুনামগঞ্জ রোডে ৪টি স্থানে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এগুলো এখনো প্রকল্পভূক্ত হয়নি। তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগুলো বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগি হলে আমাদের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত