নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুন, ২০২৩ ১৩:৩৭

৬০ শতাংশ কাউন্সিলর আ’ লীগের , বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ৮ জনের জয়

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন


সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কাউন্সিলর পদেও ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের আধিক্য।

বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতেই জিতেছেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ফলে ৬০ শতাংশ ওয়ার্ডেই জয় পেয়েছেন তারা।  বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ৮ জন জয় পেয়েছেন কাউন্সিলর পদে। দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হন তারা। এছাড়া সংসদে নিবন্ধন হারানো জামায়াত সমর্থিত ৫ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কয়েকজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

সিলেট সিটিতে গতবার ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবার আরও ১৫টি নতুনভাবে যুক্ত হয়ে ওয়ার্ড বেড়ে দাঁড়া ৪২ টি। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির অর্ধশতাধিক নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হন। এছাড়া জামায়াত সমর্থিত অন্তত ২২ জন প্রার্থী হন। প্রার্থী হওয়া নেতাদের বিএনপি বহিষ্কার করলেও জামায়াত কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

নগরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেক ওয়ার্ডে হারতে হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।

বুধবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কাউন্সিলর পদে নির্বাচিতদের মধ্যে ২০ জনই বর্তমান কাউন্সিলর।

১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদী। মহানগর বিএনপির সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত হন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সম্পাদক বিক্রম কর সম্রাট। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী  আবুল কালাম আজাদ লায়েক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক যুবলীগের কর্মী শেখ তোফায়েল আহমেদ শেফুল।

৫ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চতুর্থবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। পেশায় সাংবাদিক রেজওয়ান সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের মতো জয় পেয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় তিনি বহিষ্কৃত হন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পাওয়া সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ জামায়াত সমর্থক। অস্ত্রের মহড়া দেয়ায় এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর এবং মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মখলিছুর রহমান কামরান।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারেক উদ্দিন তাজ। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব বাবলু। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী বর্তমান কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শান্তনু দত্ত।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী বর্তমান কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম মুনিম ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. ছয়ফুল আমিন বাকের। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত সমর্থক বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক বর্তমান কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আওয়ামী পন্থী বর্তমান কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন বাকের।

২০ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ।  ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবদুর রকিব তুহিন।  ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আওয়ামীপন্থী বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হুমায়ুন কবির ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি বহিষ্কৃত হয়েছেন। ২৫ নম্বরে জয় পাওয়া তাকবির ইসলাম পিন্টু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ তৌফিক বকস লিপন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জামায়াত অনুসারী আবদুল জলিল নজরুল।

 নবগঠিত ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন রায়হান হোসেন। তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব হোসেনের ছেলে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনুসারী মাজহারুল ইসলাম শাকিল।

 ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী মো. রকিব খানের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী কাউন্সিলর নজমুল হোসেনের। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদ।

 ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন নাদিম।  নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জয়নাল আবেদীন।  তার দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জামায়াত সমর্থক রিয়াজ মিয়া।  ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন আওয়ামী লীগ নেতা।

৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আলতাফ হোসেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় সিলেট জেলা ছাত্রদলের এই সভাপতি বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে লিটন আহমদ জয় পেয়েছেন। তিনি দলনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন ফখরুল আলম। তার রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পাওয়া মতিউর রহমানের রাজনৈতিক পরিচয়ও পাওয়া যায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত