আকবর হোসেন, জামালগঞ্জ

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৮:০৮

শিক্ষকরা আসেননি, তাই বাড়ি ফিরে গেল শিক্ষার্থীরা

জামালগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর পাড়ের গ্রাম ফেনারবাক ইউনিয়নের শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে গেছে। শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, সকালে একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শ্রেণী কক্ষগুলো খুলে দিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে অসুস্থতার কারণে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

শনিবার ১২টার দিকে শান্তি পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা উড়ছে। ভবনের বারান্দায় ছাত্রছাত্রীরা ছুটোছুটি করছে, কেউ কেউ বরান্দায় বসে আছে, কেউবা বই খাতা নিয়ে বারান্দায় বসে পড়ছে। অনেকেই বই খাতা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে।

বারান্দায় থাকা তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া সুলতানা ও সাইফুল জানায়, আজকে খালি সাহেরা ম্যাডাম আইছইন, আর কোন ম্যাডাম স্যার, হেড স্যার কেউই আইজকা আইছইন না।

চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুর্বনা জানায়, আমরা সকাল থাইক্কা বইয়া রইছি, ম্যাডাম আমরার নাম ডাইক্কা গেছইনগা, আমরা বইয়া রইছি, অখন আর ম্যাডাম আইয়েনা। একই ভাবে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী ফাহিমা জানায়, আমরার ৪ জন স্যার। সকালে খালি একজন সাহেরা ম্যাডাম আইছে, অখন ম্যাডামও নাই, আমরা বইয়া রইছি।

শান্তিপুরের এক অভিভাবক বলেন, হেড স্যার আমরার গ্রামের তাইন আইননা দেইখা অন্য স্যার আর ম্যাডামরা টিক মতন ইস্কুল আইননা, ক্লাসও ঠিক মত অয়না, পোলাপাইনের ক্ষতি অইতাছে।

বিদ্যালয়ে উপস্থিতির অনেক সময় পর দেখা মিললো সহকারী শিক্ষিকা সাহেরা খাতুনের। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ্ তাই ঔষধ খাওয়ার জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। সকাল থেকে একাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ক্লাস গুলো নিয়েছি। এখন ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেনীর ক্লাসগুলো এক সাথে করে নিবো।

পাকনার হাওর পাড়ে শান্তিপুরে ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্প্রতি সদ্য শান্তিপুর বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ৩৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেনীতে ৪৪ জন, তৃতীয় শ্রেনীতে ৩০ জন, চতুর্থ শ্রেনীতে ২০ জন আর পঞ্চম শ্রেনীতে ১৫ শিক্ষার্থী আছে। গেল বছর শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে ১০ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৯ জন কৃতকার্য হয়েছে।

শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাকসুদা আজাদ নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান জানিয়ে বলেন, উপজেলা সদরে আমার ছেলের চাইল্ড কেয়ার কিন্ডার গার্টেনে আজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছিলো এ জন্য আমি বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি।

শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাহিদ হোসেন জানান, আমি পারিবারিক কাজে জামালগঞ্জে আছি। আমার স্ত্রী অসুস্থ্, তাই বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি।

ক্লাষ্টারের দায়িত্বে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, একাধিকবার এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন কর্তন করা হয়েছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নূরুল আলম ভুইয়া জানান, শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত অবশ্যই তাদেরকে কারন দর্শাতে হবে ও তাদের কাছে জবাব চাওয়া হবে। অনুপস্থিত সকল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত