নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:৫৭

ওসমানী হাসপাতালে অভিযানে যেসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা খুঁজে পেল দুদক

সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে ছয়টি। কিন্তু রোগীরা চাইলে কখনোই এসব অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পান না। অথচ গত মাসে  একটিতে  জ্বালানি খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। আর আয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার টাকা। বাকী ১৮ হাজার টাকা লোকসান হিসেবে রা হয়েছে রেজিস্ট্রার খাতায়।

তবে ৩৭ হাজার টাকা জ্বালানি খরচ ধরা হলেও কোন কোন রোগীকে পরিবহনের জন্য এই খরচ হয়েছে, এবং রোগীদের নিয়ে কোথায় যাওয়া হয়েছে তার উল্লেখ নেই। রোগীরা ভাড়া বাবদ যে টাকা দিয়েছেন তার কোন রসিদও নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।

বুধবার এ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অভিযানকালে এমন গুরুতর অনিয়মের সন্ধান পায়। দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা, এভাবে প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সই ভাড়া না দিয়েই প্রতি মাসে জ্বালানি খরচ বাবদ ১৮ হাজার টাকা করে সরকারী কোষাগার থেকে লুট করা হচ্ছে।

সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ওসমানী হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। আছে অনিয়মের অভিযোগও। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার এ হাসপাতালে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর একটি দল।

দুপুরে দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক জুয়েল মজুমদারের নেতৃত্বে এ অভিযানে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক।

অভিযান শেষে দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, বেশকিছু অভিযোগ পেয়ে আমরা আজকে অভিযানে এসেছিলাম। অভিযানে অনেক অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে অপরিস্কার-অপিরচ্ছন্নতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের রোগীদের ওয়ার্ডের টয়লেটের অবস্থা খুবই বাজে। এখানে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কাজে আউটসোর্সিংয়ে ২৬২ কর্মী কাজ করেন। কিন্তু এসব কর্মীদের দিনের পর দিন বেতন দেওয়া হয় না। গত তিনমাস ধরেও তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এই কর্মীদের কয়েক মাসের বেতন আটকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে পরে দেওয়া হয়। এর সাথে হাসপাতালেরই একটি সিন্ডিকেট জড়িত।

বেতন না পেয়ে আউটসোর্সিঙয়ের কর্মীরা মানবেতর জীবন যাবন করে। ফলে তারা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে নানা সেবার নামে টাকা আদায় করে বলেও জানান তিনি।

হাসপাতালে রোগীদের খাবার বিতরণেও অনিয়ম করা হয় জানিয়ে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, রোগীদের জন্য বরাদ্ধকৃত খাবারের চাইতে কম খাবার দেওয়া হয়। কয়েকজন রোগীর সাথে আলাপকালে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া রোগীদের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ ক্রয় করা হলেও রোগীরা পায় না। কিন্তু প্রতিমাসেই বেসরকারি ওষুধ ক্রয় করে। সরকারী ওষুধ বিতরণেও অনিয়ম করা হয়। বেসরকারি ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করার কিছুটা সত্যতা পেয়েছি।

জুয়েল মজুমদার বলেন, কিছু গুরুতর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আমরা এ ব্যাপারে আরও তদন্ত করছি। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত