আকবর হোসেন, জামালগঞ্জ

১১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০০:১৬

হাওর পাড়ের শিক্ষাচিত্র: বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১জন, শিক্ষক ২জন!

হাওর তীরবর্তী অঞ্চল সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ। উপজেলার বেহেলীর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত হাওর পাড়ের গ্রাম গোপালপুর। এই গ্রামের বিদ্যালয় গোপাল পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে সর্বসাকু্য়ে ১ জন। আর শিক্ষক আছেন দুজন। এমনই করুণ অবস্থা এই বিদ্যালয়ের।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের পাশবর্তী গ্রাম রাজাপুরে সনাতন ধর্মালম্বীদের কীর্তন থাকায় গ্রামের কোন ছেলেমেয়ে বুধবার বিদ্যালয়ে আসেনি। ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে না আসায় বরান্দায় বসে অবসর সময় পার করছেন ২জন শিক্ষক।

জানা যায়, এই ঘটনা শুধু এক-দুই দিনের নয় প্রায় প্রতিদিনের। শিক্ষকরা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ডেকে আনেন।

শিক্ষকরা বলছেন, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে এমন করুণ অবস্থা। আর অভিভাবকরা বলছেন, দারিদ্রের সংসারে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর বদলে কাজে পাঠানোই তাদের কাছে লাভজনক।
 
এই গ্রামের মানুষজন মৎস্যজীবি সম্প্রদায় ও দারিদ্র। শিক্ষার হারও একেবারে কম।

জামালগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে বেহেলী ইউনিয়নের শেষ প্রান্ত হাওর পাড়ে গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গেল বছর পিএসসিতে মাত্র ২জন পরিক্ষার্থী অংশ নেন তার মধ্যে ১ জন কৃতকার্য হন।

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্টিত বিদ্যালয় ভবনটিও ভালো নেই, জরার্জীন ভবনের মেয়াদও নেই। প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকায় হতাশ হন শিক্ষকরা।

বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষকের ২ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে গল্প করছেন, ক্লাস রুমগুলো ফাকা, কোন ছাত্রছাত্রী নেই। সকাল থেকে  প্রধান শিক্ষক বীথি রানী চৌধুরী ও সহকারী শিক্ষক জলি রানী তালুকদার বারান্দায় বসে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

গোপাল পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে ১০৮ জন ছাত্রছাত্রী আছেন। তার মধ্যে ৫ম শ্রেনীতে আছেন মাত্র ৫ জন। ৪র্থ শ্রেনীতে ১৩ জন,৩য় শ্রেনীতে ২৪ জন,২য় শ্রেনীতে ২০ জন,১ম শ্রেনীতে ২৬ জন আর প্রাক প্রাথমিকে আছেন ১১ জন। বিদ্যালয়ের ভবনটি নাজুক আর জরার্জীন, দেয়ালে বড় বড় ফাটল, আশ পাশের লোকজন লাকড়ি শুকাতে দিয়েছেন, ভেতরে ময়লা আর দেয়াল, ফ্লোর ভাঙ্গা ও নড়বড়ে মাঝে মধ্যে ফাটল দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, ভবনের সামনে অনেক বড় গর্ত।

গোপালপুরের অভিভাবক বিশ্বজিৎ দাস, শুনু লাল, রায় মনি, রুপালী দাস জানান, আমরা গরীব মানুষ, ছেলেমেয়েরা আমাদের সাথে সংসারের কাজে সময় দিতে হয়, এই জন্য ইস্কুল ঠিক মত যায় না, আর আজকে পাশের গ্রাম রাজাপুরে কীর্তন এর লাগি সব পোলাপাইন গেছেগা।

অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষিকা অল্পনা রানী দাস জানান, আমার বাসায় আজ অনুষ্টান তাই বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি।

সহকারী শিক্ষিকা নীলা রানী তালুকদার জানান, আজকে আমি অসুস্থ তাই বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি।
 
গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীথি রানী চৌধুরী জানান, নিজে প্রতিদিন বাড়ী বাড়ী ছাত্রছাত্রী আনি। ছাত্রছাত্রী না থাকায় খারাপ লাগছে। ছাত্রছাত্রী নেই তাই বরান্দায় বসে বসে গল্প করছি।  

ক্লাষ্টারের দায়িত্ব রত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,হাওর পাড়ে অবস্থিত বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান খুব নাজুক। অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নূরুল আলম ভুইয়া জানান, গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খবর পেয়েছি, অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত