নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ, ২০১৬ ২১:৫১

লাক্কাতুরা উদীচীর প্রথম সম্মেলন সম্পন্ন

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, লাক্কাতুরা চা বাগান শাখার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে আগামী দুই বছরের জন্য বীরবল লোহারকে সভাপতি, কাজল গোয়ালাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সাজন গোয়ালাকে কোষাধ্যক্ষ করে ২৩ সদস্যের কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করা হয়।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) বিকেলে লাক্কাতুরা শহীদ মিনারে লাক্কাতুরা উদীচীর প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান জনাব আশফাক আহমদ।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ অর্জন করেছি। তাই কিছু চক্রান্তকারী-ষড়যন্ত্রকারী এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির কারণে আমাদের রক্তের অর্জন বিফলে যেতে পারে না।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক-প্রস্তুতিতে সংস্কৃতিকর্মীদের অবদান অবিস্মরণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্পী-সমাজ তাদের চেতনা এবং কণ্ঠ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাই, আজও সংস্কৃতিকর্মীরা জাতিকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিতে পারে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উদীচীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধান অতিথি বলেন, মেহনতি-শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে উদীচী দীর্ঘদিন থেকে নিয়োজিত রয়েছে। উদীচী আজ শ্রমজীবী মানুষের মাঝে যেভাবে সংগঠন গড়ে তুলেছে, তা মানুষের সার্বিক মুক্তিকে তরান্বিত করবে নিঃসন্দেহে। তিনি লাক্কাতুরা উদীচীর সফলতা কামনা করে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

‘বলো জয় বলো, জয় বলো জয়- মুক্তির জয় বলো ভাই-’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্যারিস্টার মো. আরশ মেহনতি মানুষের সংগঠন উদীচী আজ সত্যিকার মেহনতি মানুষের মাঝে স্থান করে নিলো। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকারহীনতার কথা বলবার জন্যেই ১৯৬৮’র ২৯ অক্টোবর সত্যেন সেন-রণেশ দাশগুপ্তের চিন্তা-চেতনার ফসল উদীচী।

আরশ আলী আরো বলেন, দেড়শতাধিক বৎসর থেকে শোষণ-নিপীড়নের শিকার চা জনগোষ্ঠীর মানুষ উদীচীর মধ্যেই তাদের জেগে ওঠবার প্রেরণা পেতে পারেন । মানবতার মুক্তির জন্যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি উদীচীকে সকল মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

বিকেল ৫টায় উদীচী লাক্কাতুরার আহ্বায়ক বীরবল লোহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উদীচী, কেন্দ্রীয় সংসদের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার।

প্রবীর সরদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, উদীচী লড়ছে সকল প্রকার শ্রেণি বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে উদীচীর ভূমিকার কথা  তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধুমাত্র মাঠের বক্তৃতা আর ইতিহাস উলোট-পালটের বিষয় নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে নিহিত রয়েছে ষোলকোটি মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন।

তিনি বলেন, সকল প্রকার শোষণ-নিপীড়ন থেকে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের মুক্তি ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আর উদীচী সেই লক্ষ্যেই তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, উদীচী সিলেট এর সভাপতি কবি এ কে শেরাম এবং বিশিষ্ট চা শ্রমিক-মুক্তিযোদ্ধা গুণধর গোয়ালা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক রেবা সিনহা। আলোচনাসভাটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব কাজল গোয়ালা।

তার আগে উদ্বোধনের পর পর একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং তা প্রধান সড়ক ঘুরে বাগানের অভ্যন্তরস্থ ছোট ছোট কাঁচা রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

শোভাযাত্রার গান-ঢোল-করতালের আনন্দ-আহ্বানকে নারী-পুরুষগণ হাততালি দিয়ে উৎসাহ যোগান।

এরপর প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে আগামী দুই বছরের জন্য বীরবল লোহারকে সভাপতি, কাজল গোয়ালাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সাজন গোয়ালাকে কোষাধ্যক্ষ করে ২৩ সদস্যের কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করা হয়।

সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরিবেশিত হয় আবৃত্তি, গণসংগীত, নৃত্য এবং নাটক। এতে উদীচী, সিলেট জেলা সংসদ গণসংগীত, নগরনাট, সিলেট, নাটক ‘আদম টেস্ট, থিয়েটার মুরারিচাঁদ নাটক ‘লেবারলাইন ‘হল্ট’ পরিবেশন করে। উদীচী, লাক্কাতুরা শাখা আবৃত্তি, নৃত্য এবং গণসংগীত পরিবেশন করে, যা মাঠভর্তি দর্শকদেরকে বিপুলভাবে আলোড়িত করে। সম্মেলন উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য স্মারক ‘মাদল’ প্রকাশিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত