সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০১:২৪

উপমহাদেশের ‘একমাত্র’ লাল দুর্গা মৌলভীবাজারের পাঁচগাঁওয়ে

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে প্রায় ৩শ’ বছর ধরে উদযাপিত হচ্ছে উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গা দেবীর পূজা।

দূর্গার রং লাল হওয়ায় দেবী দর্শনের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা।

অষ্টমী ও নবমীর দিন এতো ভক্তের আগমন ঘটে যে, এখানে ২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে দেবী দর্শন করতে যেতে হয় ভক্তদের। ভক্তরা দেবির কাছে সার্বিক জীবনের উন্নতি অগ্রগতি চেয়ে প্রার্থনা করেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রায় তিনশত বছর ধরে ব্যতিক্রম এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে এখানে। লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা উপমহাদেশের আর কোথাও হয় না। গত ৭ই অক্টোবর সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ পূজা শুরু হয়ে আগামী ১১ই অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবার কথা রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম এই পূজা। প্রতি বছর পূজার সময় মহিষ বলির পাশাপাশি কয়েক শত পাঁঠা বলি দেয়া হয় এখানে। আগত ভক্তদের মধ্যে তা পরিবেশন করা হয়।

পাঁচগাঁও পূজা মণ্ডপের তত্ত্বাবধায়ক সঞ্জয় দাস জানান, তাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সি পদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ।

একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষ্যার বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে সুদীর্ঘ ছয় ঘণ্টা পূজা করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস দেখেন কুমারীর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে।

এই দৃশ্য অবলোকন করার পর মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা আমার পূজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি? উত্তরে ভগবতী বলেন, হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাঁচগাঁও-এর পূজামন্ডপে আবির্ভূত হয়েছিলাম। এখন থেকে ভগবতীকে লাল বর্ণে পূজা করবি।

পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস তার নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। কুমারীর গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন মাতৃমূর্তিকে।

এরপর থেকে প্রায় তিনশত বছর ধরে তাদের বাড়ির মন্ডপে লাল দুর্গার পূজা হচ্ছে। এখানে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও বাদ পড়েনি। শুধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা সম্ভব হয়নি।

ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দূর্গা বাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা।

এই দুর্গা পূজা মণ্ডপকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। প্রায় ৪৫০ দোকানে বেচাকেনা হয় বই, ফার্নিচার, খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা ইত্যাদি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত