জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

১০ অক্টোবর, ২০১৬ ১৭:১৫

জগন্নাথপুরে পানির মধ্যে পূজামণ্ডপ, দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড়

সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পৌর শহরের বাসুদেব বাড়ী এলাকার কিছু তরুণদের সমন্বয়ে একটি নান্দনিক পূজামণ্ডপ ২ বছর যাবত তৈরি হয়ে আসছে।

তাদের নান্দনিক পূজা মণ্ডপটি পানির মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে। দর্শনার্থীদের প্রতি দৃষ্টি নন্দন করে তুলতে তাদের পূজা মণ্ডপকে সাজানো হয় বিভিন্ন ধরনের আলোক সজ্জা, দৃষ্টি নন্দন দুর্গা প্রতিমা, দৃষ্টি নন্দন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানস্থলও পানির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের মধ্যে অবস্থিত চার পাড়ে বসে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সর্বসাধারণ।

এসব আয়োজন ২ বছর যাবত আয়োজিত করে থাকে স্থানীয় জগন্নাথপুর পৌর শহরের বাসুদেব বাড়ীর “আমরা ক’জন” সংগঠনটি। সংগঠনটি ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝা-মাঝি সময়ে “আমরা ক’জন” সংগঠন নামে প্রতিষ্ঠা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সংগঠনটিকে । প্রতিষ্ঠাকালে কেউ এগিয়ে না আসলেও বর্তমানে সবাই তাদের কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছেন। ক্ষুদ্র থেকে বর্তমানে বৃহৎ আকারে রূপ নিয়েছে এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাকালে ২০-২৫ জন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে প্রায় দেড় শতাধিক নেতৃবৃন্দ জড়িত রয়েছেন। পূর্বে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পূজা উদযাপন করলেও বৃহৎ রূপ ধারণ করায় ২০১৫-১৬ সালে বিশাল আকারে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা হয়। ভবিষ্যতেও আরো বিশাল আকারের পালন করা হবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জানান। তাদের আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছেন এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধরা। মুগ্ধ হয়ে তারা ভবিষ্যতেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

তাদের আয়োজনে এবারও গত বছরের মত শারদীয় দুর্গা পূজার মণ্ডপ তারা সাজিয়ে তুলেছেন পানির মধ্যে। একদিকে পানি অন্য দিকে রঙ্গিন বাঁতিতে রাঙ্গিয়ে তোলার দৃশ্য দেখতে আসছেন অনেকেই। এমন দৃশ্য দেখে কার তৃপ্তি মিটে না। তাই বার বার ছুটে আসেন অনেকেই।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের সাথে তাল মিলিয়ে পূজামণ্ডপ দেখতে আসেন মুসলমান ধর্মের অনেকেই। তাদের পূজা মণ্ডপকে নান্দনিক করে তুলতে নানানভাবে আলপনা এঁকেছেন আলপনা শিল্পীরা এবং পূজামণ্ডপে আসা সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানটি সর্বসাধারণের উপভোগের স্বার্থে বিকেল ৩ ঘটিকা থেকে রাত ৮ ঘটিকা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আগত দর্শনার্থীদের মন মাতানো গান গেয়ে উৎসাহ প্রদান করেন আগত শিল্পীরা। পূজামণ্ডপের আশেপাশের এলাকায়ও আলোকসজ্জা ও আলপনা আঁকা হয়েছে। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে।

এছাড়াও আমরা ক’জন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতিটি প্রধান প্রধান দিবসও পালন করে আসছেন। এমনকি হত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে কোনো আর্থিক সমস্যা হলেও তারা এগিয়ে আসেন। তাদের কার্যক্রমে এলাকাবাসী মুগ্ধ। তারা শুধু এসব কাজে আবদ্ধ নয় সমাজকে দায়বদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও নিয়েছেন।

আমরা ক’জন সূত্র জানায়, এবারের দুর্গাপূজার আয়োজনে আমদের সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার লক্ষ ছিল। আমরা সেসব লক্ষ পূরণ করে পূজা আয়োজন করেছি এবং আমরা মোটামুটি সাফল্য ইতিমধ্যে পেয়েছি। আমাদের সার্বিক খরচ প্রায় ৬ লক্ষ টাকা হবে। আমাদের আয়োজনে আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু করতে চাই। আমাদের এবারের আয়োজনে ডেকোরেটার্স, লাইটিং ও আলোক সজ্জায় প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ ১ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিদিন প্রসাদ বিতরণ বাবত খরচ ২৫-৩০ হাজার টাকা গুনতে হয়। পূজামণ্ডপকে সাজিয়ে তুলতে রং ও আলপনায় ১৫ হাজার টাকা এবং দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে ৭২ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

আমরা ক’জন সংগঠনের সভাপতি নিলয় রঞ্জন বণিক জানান, আমাদের প্রথমে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কিন্তু সব বাঁধা পেড়িয়ে আমরা সফলতার দোয়ারে উঠে এসেছি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার। আর এই জন্য আমরা এসব কার্যক্রম করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাবো। সমাজকে ভাল কিছু উপহার দেওয়া হল আমাদের প্রয়াস।

আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের আয়োজনে আমরা অন্যান্যদের থেকে আলাদা কিছু দিতে চাই। তাই আমরা গত দুই বছর যাবত পানির মধ্যে পূজামণ্ডপ নির্মাণ করি এবং সমাজের লোকদের ভাল কাজের প্রতি আগ্রহ থাকতে আমাদের এই অগ্রযাত্রা। অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত