নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মার্চ, ২০১৭ ১৫:৪০

ক্ষত-বিক্ষত আতিয়া মহল

সিলেট নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের শিববাড়ি এলাকার সুরম্য পাঁচতলা ভবন ‘আতিয়া মহল’। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা উস্তার আলীর বছর চারেক আগে নিজের স্ত্রীর নামে নির্মান করেন এই ভবন। এই ভবনেই আস্তানা গেড়েছিলো চার জঙ্গি। এদের মধ্যে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মাইনুল ইসলাম মুসা থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

বিশাল এই ভবনটি এখন ক্ষতবিক্ষত-কংকালসার। যেনো কেবল কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে আছে পুরো ভবনের শরীর জুড়ে গুলি বোমার চিহ্ন। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ভবনের নিচের তলার বেশিরভাগ দেওয়াল। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের দাগ পুরো ভবনটির দেওয়ালজুড়ে।
 
ভবন মালিক উস্তার মিয়া জানান, পাঁচতলার ভবনের প্রতি তলায় রয়েছে ছয়টি করে ফ্ল্যাট। সবমিলিয়ে ৩০ টি ফ্ল্যাটের ২৮ টিই ভাড়া নিয়েছিলো বিভিন্ন পরিবার। দুটি খালি ছিলো।
নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে গত জানুয়ারিতে কাওসার আহমদ ও মর্জিনা বেগম নামে দুই নারী পুরুষ দম্পতি পরিচয়ে ভাড়া নেন। কাওসার নিজেকে প্রাণ’র কমূকর্তা পরিচয় দেন।
তবে পুলিশের ভাষ্যমতে, কাওসার ও মর্জিনা দু’জনই জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত। এই ভবনে বিপুল গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক জড়ো করার তথ্যও জানায় পুলিশ।

গত শনিবার থেকে জঙ্গি দমনে এই ভবনটিতে অপারেশনে নামে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। প্রথমে ভবনের বিভিন্ন তলার দেওয়াল ও কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভবনে আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে বাইরে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। এরপর টানা চারদিন ধরে চলতে থাকে গুলি-বোমা বিস্ফোরণ। ভবনের ভেতরে গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়তে ভবনটির বিভিন্ন দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলতেও দেখা যায় সেনাসদস্যদের।

চারদিনের গুলি বোমায় কয়েকবার আগুন ধরতে ও দেখা যায় ওই ভবনে। বুধবার আতিয়া ভবনের পেছনের দিকে ঘিরে দেখা যায়, নিচ তলার পুরো দেওয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। পাশের জমিতে পরে আছে ইট সুরকী। উপরের দিকও ভাঙ্গাচোরা। আগুনে কালো হয়ে আছে অনেক ছাদ। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘিরে রেখেছেন পুরো বাড়িটি।

ভবনটির ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, পুরো ভবনটি বিস্ফোরকে ঠাসা ছিলো। এগুলো বিস্ফোরণের ফলে ভবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটি বিস্ফোরণের ফলে ভবনের কলাপসিবল গেট উড়ে এসে পাশের ভবনে পড়ে। এরকম অনেকগুলো বিস্ফোরণ হয়। ফলে পুরো ভবনটিই এখন নড়বড়ে।

তিনি বলেন, এই ভবনে এখনো বিস্ফোরক থাকতে পারে। পুলিশ তা পরীক্ষা করে দেখবে এবং নিষ্ক্রিয় করবে। এজন্য অনেক সময় লাগবে।

অপারেশ টোয়াইলাইট নামের এই অভিযান গতকাল সমাপ্ত করে সেনাবাহিনী। এরপর বিকেলে আতিয়া ভবন বুঝিয়ে দেওয়া পুলিশকে।

সিলেট মহানগরীর মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল ভবন বুঝে পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, পুরো ভবনটি এখনো অনেক বিপদজ্জনক। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বোমা-স্পিণ্টারের খোসা। তাজা বোমা রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে। আজ (বুধবার) থেকে পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞরা তা খতিয়ে দেখতে কাজ করবেন। তবে দুপুর পর্যন্ত বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম আসেনি বলে জানান তিনি।

জঙ্গিদের বিস্ফোরণ ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে ভবনটি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিচের তলা পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে। কেবল পিলারগুলো আছে। উপরের তলাগুলোও অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত