নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মার্চ, ২০১৭ ০১:০৮

গুলি থামলেও কাটেনি আতঙ্ক, সচল হয়নি জীবন

বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকা

ছয়দিন ধরে গ্যাসসংযোগ নেই, বিদ্যুৎও সবসময় থাকে না। অনেক সড়ক দিয়ে যান চলাচল নিষিদ্ধ। হেঁটে চলায়ও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আশপাশের অনেকটা এলাকাজুড়ে দোকানপাট সব বন্ধ। গত পাঁচদিন ধরে এই হচ্ছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকার অবস্থা।

মঙ্গলবার সেনাবাহিনী 'অপরাশেন টোয়াইলাইট' নামের জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে। ফলে বুধবার আতিয়া মহল এলাকা থেকে ভেসে আসেনি কোনো গুলি-বোমার বিকট শব্দ। তবে বিস্ফােরণ থামলেও এখন আতঙ্ক কাটেনি এই এলাকবাসীর। ফিরেনি প্রাণচাঞ্চল্য। এখনো এখানকার জনজীবনে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

পাঠানপাড়া, পৈত্যপাড়া, খানবাড়ি, জৈনপুর, আচার্যপাড়া, কৃষাণপুর, ফকিরপাড়া, গালিমপুর, চান্দাই, নুরপুর, শিববাড়ি- এই কয়েকটি পাড়া নিয়ে বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকা। গত শুক্রবার থেকে দেশজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো এই এলাকা।

জঙ্গিবিরোধী এই অভিযানের ফলে গত ছয়দিন ধরে এ এলাকাগুলোর মানুষের জীবন পুরোটাই থমকে আছে। সবচেয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায়। অনেকের ঘরে আবার খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

খানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আজম খান। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে গ্যাস না থাকায়। ছয়দিন ধরে বাড়ির উঠানে উনুন বানিয়ে রান্নাবান্না করা হচ্ছে,  কেউ কেউ কেরোসিনের স্টোভে রান্না করছেন। এই কদিন তো গুলি-বোমার শব্দে তো বাচ্চাকাচ্চারা ভয়ে সারাদিন ঘরে গুটিসুটি মেরে থাকতো। বুধবার থেকে এসব থামলেও আতঙ্ক কাটেনি।

আজম খান জানান, অভিযান চলাকালে এলাকা ছেড়ে অনেকে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

আজম খান বলেন, কষ্ট হলেও আমরা চাই আমাদের এলাকা এবং দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল হোক। জঙ্গি আস্তানার অপবাদ থেকে মুক্তি চায় এলাকার সব মানুষ।

শনিবার থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিলেট-ফেঞ্জুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল। মঙ্গলবার অপরেশন শেষ হলেও বুধবারও খুলে দেওয়া হয়নি এ সড়ক।

আতিয়া মহলে এখনো বিস্ফোরক থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দূর্ভোগ কাটছে না এলাকাবাসীর। এখনো পুলিশ ঘিরে রেখেছে আতিয়া মহল। এই এলাকায় হেঁটে যেতেও নিষেধ করা হচ্ছে।

বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকার হাজারখানেক পরিবারের বসবাস। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকের ঘরেই খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ থাকায় কোনাকাটা করতে পারছেন না। আবার যান চলাচল বন্ধ থাকায় দূরের দোকান থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় কিনে আনতে পারছেন না অনেকে। পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সবাই।

কদমতলী বাড়বাড়ি এলাকার মুদি দোকানী আতাউর রহমান। চারদিন ধরে তাঁর দোকান বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এই দোকান। এটি চারদিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় খুবই কষ্টে আছি। কিভাবে যে জঙ্গিরা আমাদের এলাকাই বেছে নিলো তা বুঝতেছি না। এখন এদের নির্মূল করতে না পারলে তো আমাদের জন্যই বিপদ।

একই রকম কথা জানালেন সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে পারাইচক মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার তিনশতাধিক ব্যবসায়ী। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

বন্ধ রয়েছে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। আতিয়া মহলের পাশের জহির-তাহির মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, গোটাটিকর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জৈনপুরের মহালক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জালালাবাদ গ্যাসের দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক রস্তম আলী চৌধুরী বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই এলাকার বাসাবাড়ির গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। আবার নির্দেশ পেলে সংযোগ চালু করা হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রোকন উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থেই সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

মানুষের জটলা লেগে যাওয়ার কারণে শনিবার অভিযান চলাকালেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, এতে ছয়জন মারা যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা এই এলাকার সকল দোকানপাট বন্ধ রেখেছি। মানুষের চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করেছি। দ্রুতই সড়কটিতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বুধবারও শিববাড়ি এলাকায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আতিয়া মহল ঘিরে রাখতে দেখা যায়। শনিবার থেকে শুরু হয় সেনা কমান্ডোদের অভিযান 'অপরােশন টোয়াইলাইট'-এ এই বাড়িতে নিহত হন চার জঙ্গি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, ঢাকা থেকে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এখানে আসবে। আমরা তাদের অপেক্ষায় রয়েছি। বাড়ির ভেতরে এখনো দুই জঙ্গির মরদেহ পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত