নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০১:৩৮

বৃষ্টিতে সতেজ চা বাগান, উৎপাদন শুরু

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

মার্চের শুরু থেকেই বৃষ্টিতে সতেজতা ফিরেছে সিলেটের চা বাগানগুলোতে। কচি চা গাছের রুক্ষতা দূর করে বৃষ্টিতে ফিরেছে সতেজতা। আগাম বৃষ্টির কারণে আগেই উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাগানগুলোতে।

সিলেট আবহাওয়া অফস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে আরো বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চা বাগান সংশ্লিস্টরা বলছেন, এই সময়ে বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

গত কয়েকবছর ধরেই চা উৎদাপন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াচ্ছে। গতবছর রেকর্ড সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয় দেশে। সংশ্লিস্টদের আশা, শুরুর মতো পুরো মৌসুম আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর উৎপাদন গত বছরকেও ছাড়িয়ে যাবে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়,  দেশের ১৬২ টি বাগানের মধ্যে সিলেটেই রয়েছে ১৩১ টি চা বাগান। এসব বাগানের ১.২ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে  প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়।

চা বাগান সংশ্লিস্টরা জানান, মার্চ থেকে সাধারণত চায়ের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়। অন্যান্য বছর মার্চের শেষের দিকে উৎপাদন শুরু হয়। এবছর আগেভাগে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মার্চের শুরুতেই উৎপাদন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন,  দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাগানের কৃত্রিম সেচ সুবিধার অভাব রয়েছে। সিলেটে চা বাগানগুলোর সবকটিই পাহাড়ি ভ’মিতে, ফলে বাগানের জমিতে গভীর নলকুপ স্থাপন করাও সম্ভব হয় না। বাগানের ভেতরে প্রাকৃতিক যেসব পানির উৎস ছিলো, যেমন- খাল, ছড়া; সেগুলোও হয় ভরাট হয়ে গেছে, নতুবা বছরের এই সময়টাতে পানিশূন্য থাকে। ফলে চা উৎপাদের জন্য এই সময়টাতে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে চা পাতা লালচে হয়ে পড়ে এবং লাল মাকড়সার আক্রমনসহ নানা ধরণের রোগবালাই দেখা দেয়। ফলে উৎপাদনে ধ্বস নামে। এই বছর ইতোমধ্যে কয়েকটি বাগানে লাল মাকড়সার আক্রমণের খবর পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি গত কয়েকদিনের বৃষ্টি মাকড়সা তাড়াতে সক্ষম হবে।

চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর চা বাগানের মোট ভূমির আড়াই শতাংশে চা উৎপাদন বৃদ্ধি করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলে অনেকসময় এটা সম্ভব হয় না।

সিলেট নগরীর পাশবর্তী লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা চা গাছ ট্রিপিং ( গাছের আগা সমান করা) করছেন। শ্রমিকরা জানান, ট্রিপিংয়ের পর প্লাগিং শুরু হবে।

লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন বলেন, চা উৎপাদন অনেকটাই বৃষ্টির উপর নির্ভশীল। এবছর আগেভাগে বৃষ্টি নামায় উৎপাদনও আগেভাগে শুরু হয়েছে। তিনি উৎপাদন বাড়াতে কেবল প্রকৃতির উপর নির্ভও না থেকে বাগান ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ও প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানোর পরামর্শ তাঁর।

সিলেটে শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ বলেন, এই সময়ে বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষত নবীন গাছের (০-৫ বছর বয়সী) জন্য বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিলেটের খাদিম চা বাগানের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বছরের শুরুতে বৃষ্টিহীনতা কারণে যে ক্ষতি হয়েছে এখনকার বৃষ্টি তা অনেকটাই পুষিয়ে দিতে সক্ষম হবে।
কেবল সিলেট নয়, হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতেও স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক বৃষ্টি।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম বলেন, এই বৃষ্টি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির অভাবে বাগানের ভেতরের পানির প্রবাহও শুকিয়ে গিয়েছিলো। ফলে সেচের সুযোগ ছিলো না। এতে চা গাছ রুক্ষ হয়ে পড়েছিলো। বৃষ্টির কারণে গাছে সতেজতা ফিরেছে।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চাঁদপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শামীম হুদা বলেন, চা উৎপাদনে পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাগানের ভেতরে সেচের তেমন সুযোগ না থাকায় আমাদের সবসময় বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকতে হয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি চা বাগানগুলোতে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত