শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

০৫ এপ্রিল, ২০১৭ ২৩:০০

হবিগঞ্জে ফসল বাঁচাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ দিচ্ছেন কৃষকরা

আকাশে কালো মেঘ জমার সাথে সাথে হবিগঞ্জের আতুকুড়া গ্রামের কৃষকদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে। বৃষ্টির পানির সাথে কৃষকের চোখের পানিও একাকার হয়ে যায় জেলার বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের কৃষকদের। এই দুঃখ আর হতাশা থেকে মুক্তি পেতে সাফরা হাওড় ও শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড়ে ধান রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করছেন আতুকুড়া গ্রামের কৃষকরা।

দীর্ঘদিন যাবত সাতাই নদী থেকে প্রবাহিত ২টি খাল ডোফাজুরা ও জুড়ি খালে স্লুইচ গেট নির্মানের দাবি করে আসছেন গ্রামবাসী। জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আতুকুড়া গ্রামের কৃষকদের দুশ্চিন্তার মূল কারণ। এই বৃষ্টির ফলে সাতাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এলাকার কৃষকদের দুশ্চিন্তাও বৃদ্ধি পায়। কারণ, সাতাই নদীর পানি ডোফাজুরা খাল হয়ে সাফরা হাওড় এবং জুড়ি খাল হয়ে শোনাডুবা/ খাগাউরা হাওড়ে প্রবেশ করলে আতুকুড়া, উমেদনগর, বাগজুর, আলমপুর, নাগুরা, আদম নগর, শিবপুর, মেওতুল, শোনাডুবা, নতল্লাপুর, টেরাইট্টা ও পাথাইরা গ্রামের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাবে পানির নিচে।

তাই গত ৫ দিন যাবত আতুকুড়া ও আশপাশের গ্রামের প্রায় ৪০ জন কৃষক মিলে ডোফাজুরা খাল ও জুড়ি খালের প্রবেশদ্বারে বাঁধ দিচ্ছেন সাফরা হাওড়ে শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড়ের ধান বাঁচানোর জন্য। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে বাধঁ দিচ্ছেন গ্রামবাসী। বাঁধ ভেঙ্গে যেনো পানি হাওড়ে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রতিরাতে ২ থেকে ৩ জন পালাক্রমে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ২টায় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মাঝে ছাতা নিয়ে ডোফাজুরা খালের বাঁধে দাড়িয়ে আছেন কৃষক হাজী আলফু মিয়া। সাফরা হাওড় ও শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড়ে কৃষক আলফু মিয়ার প্রায় ৮০ বিঘা ধানী জমি আছে। তাই অধিক দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা যায় তার চোখে, মুখে, কথায়।

কৃষক হাজী আলফু মিয়া মিয়া বলেন, “আজ ৫-৬ দিন যাবত ১৫/২০ জন মিলে মাটি কাটতাছি বান (বাধঁ) দেওয়ার ল্যাইগ্গা। আমার ঘর সংসার চলে এই ধান বেইচ্চা। যেভাবে পানি আইতাছে, আমার সব ক্ষেত (জমি) ভাসাইয়া লইয়া যাইবো। হাওড়রে পানি থেইক্কা বাঁচাইতে হইলে, কৃষকরে বাঁচাইতে হইলে ডোফাজুরা ও জুড়ি খালের মুখে স্লুইচ গেইট দেওয়া লাগবো।"

অপরদিকে, শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, হাওড়ের পানি প্রবেশমুখ জুড়ি খালে মাটি কেটে বাঁধ দিচ্ছেন প্রায় ২০ জন গ্রামবাসী। বৃষ্টির মধ্যেই স্বতস্ফুর্তভাবে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছে স্কুল পড়ুয়া অনেক ছাত্র।

আতুকুড়া গ্রামের খান বাহাদুর ইয়াহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র কদর আলী জানায়, “তুফানের ল্যাইগ্গা তাড়াতাড়ি স্কুল ছুটি হইছে। বাড়িত যাওয়ার পর মাইয়ে (মা) কইন, তাড়াতাড়ি বন্দো (হাওড়ে) মাটি কাটাত যা। ক্ষেত (জমি) সব পাইন্নে (পানি) লইয়া যাইবো। আমরার কিছু ক্ষেত (জমি) আছে শোনাডুবা হাওড়ো। এই ধান দিয়াই আমরার সারা বছর ঘরের খাওন চলে।”

কৃষক আজম আলী, আখলাছ মিয়া, আরফান আলীসহ আতুকুড়া গ্রামবাসী জানান, সাতাই নদীর ২ দিকে ডোফাজুরা ও জুড়ি খালের মুখে স্লুইচ গেট দিলে সাফরা ও শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড় রক্ষা করা সম্ভব।

কৃষকরা জানান, র্দীঘদিন যাবত তারা সাতাই নদীতে স্লুইচ গেট নির্মাণের দাবি করে আসছেন। স্লুইচ গেট না থাকায় প্রায় প্রতি বছরই সাফরা ও শোনাডুবা/খাগাউরা হাওড় প্লাবিত হয়।

সুবিদপুর ইউনিয়নের কৃষি অফিসার নতেন্দ্র পাল বলেন, "অতিবৃষ্টি এবং উজানের পানি বৃদ্ধি পেলে সাফরা হাওড়ে প্রায় ২০০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। গত বছরও বৃষ্টি এবং উজানের পানিতে এই হাওড়ে অনেক জমি তলিয়ে গিয়েছিল। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে সাতাই নদীতে স্লুইস গেট নির্মান করা আবশ্যক।"

সুবিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, "বিগত ২ বছর পূর্বে হাওড় এলাকার ফসল রক্ষার জন্য স্লুইস গেইট নির্মাণের জন্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত