দেবকল্যাণ ধর বাপন

২৩ জুন, ২০১৭ ২২:১৩

তিল ধারণের ঠাঁই নেই শপিংমল আর ফ্যাশন হাউসগুলোতে

সিলেটে শেষ মূহূর্তে এসে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা

দেরীতে হলেও একেবারে শেষ মূহুর্তে এসে নগরীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। আর ক'দিন পরেই ঈদ-উল-ফিতর। ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় এখন ব্যস্ত নগরীর ক্রেতারা।

বিশেষ করে নগরীর অভিজাত শপিং মলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে ক্রেতাদের। নতুন ডিজাইনের জামা-কাপড়ের পাশাপাশি চলছে পোশাকের সাথে মিলিয়ে জুতা ও গয়না কেনার ধুম।

শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শপিংমল গুলো ঘুরে দেখা গেছে কোথাও যেন তিল ধারণের ক্ষমতা নেই। দিন গড়িয়ে মধ্যরাত রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা।

তবে এবার পোষাকের দাম অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। উচ্চ মূল্যেই বিত্তশালীরা কাপড়-চোপড় ও পরিধেয় সাজ সরঞ্জাম ক্রয় করলেও নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষগুলো পড়েছে মহা সমস্যায়। বেশি দামে ব্যবহার্য পণ্য ক্রয়ে তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন।

তারপরেও নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত অথবা বিত্তশালী সবাই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সেরে নিচ্ছেন শেষ সময়ের কেনাকাটা।

এদিকে বেশিরভাগ ক্রেতারা জিন্দাবাজার মুখি হওয়ার কারণে জিন্দাবাজার-বন্দর, জিন্দাবাজার- জল্লারপার, জিন্দাবাজার-বারুতখানা, জিন্দাবাজার চৌহাট্টা সড়কে মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এছাড়াও নগরীর নয়াসড়ক, আম্বরখানা, কুমারপাড়া সড়কে দেখা গেছে  দীর্ঘ যানজট ।

নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার শপিং মল সিলেট সিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগ নেই বিক্রেতাদের। ব্যস্ততার মধ্যেই ফেয়ার লেডী ও ড্রেস লাইনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুন্না আহমেদ বললেন, থ্রি-পিস, কাটা থ্রি-পিস দুটোই খুব ভালো চলছে। শিশুদের জন্য দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি চীন, থাইল্যান্ডের পোশাকের চাহিদাও রয়েছে অনেক।

এছাড়া মল্লিকা শাড়ী ঘরের স্বত্বাধিকারী বললেন, ভারতীয় কিছু নতুন ডিজাইনের শাড়ী বাজারে এসেছে। দেশী তাঁতের শাড়ি, জামদানি, ঢাকাই জামদানি, হাফ সিল্কসহ টাঙ্গাইলের শাড়ির বিপুল চাহিদা রয়েছে বলে জানালেন তিনি। তিনি আরো জানালেন, যতই দিন যাচ্ছে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। আশা করছি এবারের শেষ সময়ের ঈদের বাজার আরো ভালো যাবে।

নগরীর ব্লু-ওয়াটার, সিটি সেন্টার ছাড়াও আলহামরা, সিলেট প্লাজা, মিলেনিয়াম, কাকলী, শুকরিয়া মার্কেট, মধুবনসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানের সাথে সাথে বারুতখানা, কুমারপাড়া, নয়াসড়কের ফ্যাশন হাউজগুলোতে চলছে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা।

নগরীর নয়াসড়ক এলাকার ফ্যাশন হাউস মাহা'র সত্ত্বাধিকারী মাহিউদ্দিন সেলিম বলেন, গতবারের তুলনায় এবারের ব্যবসা অনেক ভালো হচ্ছে। এবারের ঈদে পণ্যের বৈচিত্রও বেশি। ঈদের বাজারের আগামী কয়েকদিন আরো ভালো যাবে বলে আশাবাদ তাঁর।

মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও পিছিয়ে নেই কেনাকাটায়। ব্লু-ওয়াটার শপিং মলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ছেলেদের উপচেপড়া ভিড়। এই শপিংমলে সুতি পাঞ্জাবি তিনশ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, জর্জেট পাঞ্জাবি দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, সিল্ক পাঞ্জাবি (ভারতীয়) দুই হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা, জামদানি পাঞ্জাবি ৭০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, টিস্যু পাঞ্জাবি সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা, মটকা পাঞ্জাবি ১২০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা দাম রয়েছে। বিভিন্ন সাইজের শার্ট ৪০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ছোটদের ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, বড়দের ৭০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা, গ্যাবাডিন প্যান্ট এক হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।

কাপড়ের পাশাপাশি জুতার বাজারও বেশ জমজমাট। নগরীর জিন্দাবাজারে অবস্থিত পায়েপায়ে, এক্সিলেন্ট সুজ, চন্দ্রা সুজ, খান সুজ, ডারবী সুজ এর শো-রোম গুলোতে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে।

এ ছাড়াও ব্যান্ডের এপেক্স, বাটা, বে, জেনিস, অরিয়ন, লোট এর একাধিক শো-রুম গুলোতে নতুন ডিজাইনের জুতার প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশী।

কাকলী শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা গোলাম রাব্বানি বলেন, “এত দিন কাজের চাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে  ঈদের কেনাকাটা করতে পারিনি। আজ মার্কেটে আসলাম পরিবার নিয়ে।"

মিরাবাজার থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা এক নারী জানান, নিজের জন্য শাড়ী আর ঘরের সকলের জন্য জামা-কাপড়, জুতো-স্যান্ডেল কিনেছেন। এ ছাড়া আরো অনেক কেনাকাটা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অফিসিয়াল কাজের চাপে অন্যদিন আসার সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে সন্তানের পড়ালেখা। তাই একদিকে ব্যাংক বন্ধ আর আজকে ঈদের আগের শেষ শুক্রবার হওয়ায় সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বাজার করতে চলে আসলাম।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত