নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:২১

সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলোতে ৪ বছরে রাজস্ব কমেছে ৬৩ কোটি টাকা

২০১২-১৩ অর্থবছরে সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলো থেকে আদায় হয়েছিল ২৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকার রাজস্ব। অথচ চার বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আহরণে উলটোচিত্র দেখা যাচ্ছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সিলেটের ১২টি শুল্ক স্টেশন থেকে রাজস্ব এসেছে ১৯৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আহরণ কমেছে প্রায় ৬৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একই সঙ্গে গেল অর্থবছরে সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলো থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।

রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলো মূলত আমদানি-নির্ভর। এগুলো দিয়ে প্রধানত কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি হয়। বেশির ভাগ শুল্ক স্টেশনে পণ্য দুটির আমদানি ছাড়া আর কোনো কার্যক্রমই নেই। গত কয়েক বছরের বেশির ভাগ সময়ই কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ ছিল। ভারতীয় আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত অর্থবছরের অনেকটা সময় বন্ধ ছিল পণ্য দুটির আমদানি। এখনো সিলেটের সব শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও কয়েকটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। রাজস্ব আহরণে এর প্রভাব যথেষ্ট পড়ছে। পণ্য দুটির আমদানি বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছর। ওই সময়ে মাত্র ১৪৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতি সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের যুগ্ম কমিশনার নেয়ামুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরে সিলেটের ১২টি শুল্ক স্টেশন, বিমানবন্দর ও এয়ারফ্রেইট বিভাগ থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয় প্রায় ১৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব।

আমদানির পতনের কারণে রাজস্ব কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলোয় রাজস্ব আহরণের গ্রাফটি নিম্নমুখী। তিনি জানান, তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। চলতি অর্থবছরেই এর কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাড়বে। ফলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বাড়বে। গত অর্থবছরে তামাবিল শুল্ক স্টেশন থেকে আদায় হয়েছে ৪০ কোটি ৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকার রাজস্ব।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে ছাতক শুল্ক স্টেশন দিয়ে। এ সময়ে শুল্ক স্টেশনটি থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৫২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকার রাজস্ব। তবে ৮১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ের পরিমাণ অনেকটাই কম।

শুধু ছাতকই নয়, ইছামতি, ভোলাগঞ্জ, চেলা ও জুড়ি শুল্ক স্টেশন দিয়েও গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ হয়নি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে তামাবিল, শ্যাওলা ও জকিগঞ্জসহ কয়েকটি শুল্ক স্টেশন।

গত অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ কোটি ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকার রাজস্ব এসেছে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন থেকে। এর চার বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এখান থেকে প্রায় ১২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এছাড়া এয়ার কার্গো সার্কেল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বৈদেশিক ডাক ইউনিট থেকে গত অর্থবছরে প্রায় ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত