নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ আগস্ট, ২০১৭ ১৫:৫৮

সংসদে আবার ষোড়শ সংশোধনী পাস করব, অনবরত করতেই থাকব: সিলেট অর্থমন্ত্রী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংসদে আবার পাস করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

উচ্চ আদালতের রায়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রীসভার এই প্রবীণ সদস্য বলেন, সংসদে আমরা আবারও ষোড়শ সংশোধনী পাস হবে। এবং অনবরতভাবেই এটি করতে থাকবো। দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যায়। বিকজ জুডিশিয়ারি পজিশন আমার মতে আনটিনেবল (অন্যায্য)।'

অর্থমন্ত্রী বলেন, 'মানুষের প্রতিনিধির উপর তারা খোদগারি করবে? তাদের আমরা চাকরি দেই।'

শুক্রবার (৪ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

সিলেটে দীর্ঘদিন ধরেই একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি উঠেছে। অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিলো সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। গত ৩১ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই চলছে ভূমি নির্বাচনের কাজ।

শুক্রবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি পরিদর্শনে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বিচারকরা জনগণের প্রতিনিধিদের উপর খবরদারি করেন। অথচ আমরা তাদের নিয়োগ দেই। বিচারদের এমন আচরণ ঠিক নয়।

শুক্রবার ভূমি পরিদর্শনকালে অর্থমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আবুল মোমেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়রম্যিান আশফাক আহমদ প্রমুখ।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে করা সরকারের আপিল গত ৩ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খারিজ করে দেয়। এরফলে উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণে ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত রইল বলে জানান আইনজীবীরা। এনিয়ে প্রধান বিচারপতি ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই বাদানুবাদ চলছে। সংসদেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংসদ ও মন্ত্রী।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির স্বাক্ষরের পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এই রায় ঘোষণার পর এই প্রথম সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল।

এর আগে ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ হয়। পরে যেকোনো দিন এ রায় ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। শুনানি শুরু হওয়ার ১১তম দিনের শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

গত ৩০ মে দশম দিনের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন। যার মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য আদালত ১২ সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১২ জনের মধ্যে ১০ জন আদালতে তাঁদের মতামত উপস্থাপন করেন। অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত হলেও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি।

বক্তব্য প্রদান করা ১০ জনের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। বাকিরা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেয়া নয় আইনজীবী হলেন— ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম আই ফারুকি এবং এ জে মোহাম্মদ আলী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল। সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে, এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাই কোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাই কোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেন আদালত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত