নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ০০:৫১

দল হারলেও হারেনি সিলেটের দর্শক

টানা পরাজয়ের বৃত্তে দল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স। সেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের দেখা নেই অনেকদিন ধরে। তবে রোববার সিলেটে দর্শকদের আচরণে মাঠে দলের পারফরম্যান্সের কোনো ছাপ নেই।

সন্ধ্যা শুরু হবে খেলা। অথচ দুপুর থেকে নগরীর বেশিরভাগ সড়কেই তীব্র জ্যাম। সকলে ছুটছে স্টেডিয়ামমুখী। বিকেল হওয়ার আগেই নগরীর লাক্কাতুরার ১৮ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বেশিরভাগ আসনই পূর্ণ হয়ে যায়। স্টেডিয়ামের বাইরেও ঢাকঢোল বাজিয়ে দর্শকদের উচ্ছ্বাস। হবেই না বা কেনো, সিলেটে তো এই প্রথম খেলছে বাংলাদেশ। রোববারই সিলেটে অভিষেক হলো বাংলাদেশের।

চা বাগান আর টিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা এই স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের স্বীকৃতি পায় ২০১৪ সালে। এরপর প্রায় ৪ বছর পর সিলেটে প্রথমবারের মতো খেলতে আসলো বাংলাদেশ।

সিলেটে বাংলাদেশ দলের প্রথম খেলা উপলক্ষে শুরুতে বিসিবির পক্ষ থেকে ছোট্ট আনুষ্ঠানিকতারও আয়োজন করা হয়। এই ম্যাচের টস করা হয় বিশেষ কয়েনে। যা স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে বিসিবি কার্যালয়ে। এছাড়া দুই দলকে স্মারক উপহার তুলে দেন সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম নাদেল। অভিষেক উপলক্ষে প্রেসবক্সেও বিতরণ করা হয় স্মারক উপহার।

সিলেটে শুরুর ‘শুরু’টা ভালোই হয় বাংলাদেশের। টস জেতেন টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের উপর ছড়ি ঘোরাতে থাকেন দুই লঙ্কান ওপেনার। বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনো করে ২১০ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমেও বিবর্ণ বাংলাদেশ। উইকেটে একের পর এক আসা যাওয়ার প্রতিযোগিতা। যে সৌম্য আগের ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক তুলে নিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি কাল রানের খাতা খোলার আগেই ফিরলেন সাজঘরে।

মাঠে দলের এই বিবর্ণ পারফরম্যান্স গ্যালারির উচ্ছ্বাসে কোনো ভাটা ফেলতে পারেনি। পুরোটা সময় চিৎকার-হল্লা করে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, প্ল্যাকার্ড ব্যানার উঁচিয়ে দর্শকরা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলকে।

প্রায় তিনঘণ্টা দূরত্বেও পথ বাড়ি দিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন কলেজ ছাত্র ফাহমিদ আহমদ। বাংলাদেশ দলের খেলা মন ভরাতে না পারলেও নিজেদের মাঠে বসে দেশের খেলা দেখতে পেয়ে খুশি তিনি।

ফাহমিদ বলেন, সিলেটে এতো সুন্দর মাঠ। অথচ এতদিন এখানে বাংলাদেশের খেলা না হওয়াটা হতাশাজনক। আমরা চাই সিলেটে আরও বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে।

বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ দেওয়া ব্যানার নিয়ে মাঠে এসেছিলেন ব্যবসায়ী সৈকত আহমদ। তিনি বলেন, হারুক-বা জিতুক আমরা সবসময় বাংলাদেশ দলের সাথে আছি।

খেলায় বাংলাদেশ হেরেছে। তাতে কী! সিলেটের দর্শকরা তো হারেননি। ম্যাচ শুরুর আগেই তারা জানিয়ে দিয়েছেন- সুসময় কিংবা দুঃসময়ে- সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছেন তারা। আগামীতে সিলেটের মাঠে আরও বেশি বেশি বাংলাদেশের ম্যাচের দাবি তারা এবার করতেই পারেন।

সেই আশ্বাসও দিলেন বিসিবির পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। তিনি বলেন, সিলেটের মাঠ ও দর্শকদের ব্যাপারে আইসিসি খুবই সন্তুষ্ট। এখানকার দর্শকরা খুবই স্পোর্টিং। যেকোনো খেলায়ই প্রচুর দর্শক সমাগম হয়। তাই আগামীতে সিলেটে আরও বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আশা আমরা করতেই পারি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত