রিপন দে, মৌলভীবাজার

০৩ মার্চ, ২০১৮ ২১:৪৭

চা বাগানে চলছে ফাগুয়া উৎসব

বসন্তের রং লেগেছে মৌলভীবাজারের জেলার বিভিন্ন চা বাগানে। তাই বসন্তের রং-রূপে নতুন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। আগাম বৃষ্টিতে চা-বাগানের দৃশ্য দ্রুত সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে। প্রতিবছরে মার্চ মাস থেকেই দু’এক পশলা বৃষ্টি হয়। এবার ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে একদিন বৃষ্টির দেখা মেলার ফলে মৌসুমের আগেই চা পাতা চয়নে নেমেছেন মহিলা চা শ্রমিকরা।

এদিকে চা বাগানের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। মজুরি বৃদ্ধিতে এককালীন এক বছরের বোনাস পাওয়া শ্রমিকদের ফাগুয়া উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। লক্ষ লক্ষ চা গাছ দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি টিলার পর টিলা। সবুজের সাথে বিবর্ণ চা শিল্পাঞ্চলের মানুষগুলোর মাঝে রংধনুর সাতরং ভর করেছে। তারা মেতে উঠেছে রঙের উৎসব ফাগুয়ায়।

বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ ,হলুদ, কমলা লাল-কি নেই? যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই রঙের ছড়াছড়ি। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সীরা মেতে ওঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। একে অপরের দিকে রং ছুড়ে মারছেন, গান গাইছে, নাচছেন। চা বাগানগুলোতে এভাবেই চলছে সপ্তাহব্যাপী দোল উৎসব। ছন্দ-তাল লয়হীন এসব চা শ্রমিকের কঠিনতম জীবনে ফাগুয়া উৎসব এসেছে মহানন্দের জোয়ার। সেই জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি চা-বাগানের বিভিন্ন এলাকায়। চা বাগান গুলোতে শুধুই রং আর রঙের ছড়াছড়ি। হিন্দুধর্মীয় চা-শ্রমিকেরা সাতদিনব্যাপী রং মাখামাখি, রং ছোড়াছুড়ি করে থাকে। এজন্য প্রতিটি চা বাগানে চলছে সপ্তাহ ব্যাপী এই দোল উৎসব।

বছরে অনেকগুলো উৎসবের মধ্যে এই দোল উৎসবে চা-জনগোষ্ঠীর মানুষজন সুযোগ পায় একটু আনন্দের। এটি তাদের কাছে রঙের উৎসব ফাগুয়া নামে পরিচিত। এ সময় পুরো চা-বাগান এলাকা নানা রঙে রঙিন হয়ে যায়। চিরসবুজ চা-বাগানে লাল, নীল, হলুদ, কালো, সবুজ নানা রঙের ছড়াছড়ি হয় তখন। এই দোল উৎসব উপলক্ষে বাড়তি আনন্দ প্রদান করে তাদের ঐতিহ্যবাহী কাঠি নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে। প্রতিটি চা-বাগানে তরুণ-তরণী সেজে নাচের দল নিয়ে বের হয় শ্রমিক লাইনে। মাদলের তালের সঙ্গে পাহাড়ি গানের সুর সৃষ্টি করেছে এক রকম আবহ, মাধুর্য। নিজের অজান্তেই যেন হারিয়ে যাওয়া যায় এক অন্য রকম শৈল্পিক নেশায়।

প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে আর চৈত্র মাসের প্রথমে পূর্ণিমা তিথিতে চলে এ উৎসব। উৎসব উপলক্ষে চা বাগানে দুই দিনের ছুটি দেয়া হয়। এ সময় চা শ্রমিকদের বাড়িতে বাড়িতে চলে আনন্দ উৎসব। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে তখন বেড়াতে আসে মেয়েরা। উৎসব শেষে ছোপ ছোপ রঙের দাগ লেগেই থাকে চা-বাগানের অলিগলিতে, শ্রমিক লাইন, বাড়ি ঘরের আঙিনায়। সারা বছরে এই সময়ে তারা উৎসকে মাতিয়ে রাখে সারা বাগান। ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় পিঠা-পুলিসহ নানা মুখরোচক খাবারের।

শমশেরনগর ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন সারা বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর মতো কমলগঞ্জের প্রত্যেকটি চা বাগানগুলোতেও ফাগুয়া উৎসব পালিত হচ্ছে। এ উৎসব তিনদিন এ পালিত হবে। ফাগুয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে চা বাগানে চা শ্রমিকরা নানা আয়োজন করে থাকে। সবাই রঙ নিয়ে ছড়াছড়িসহ লাঠি খেলা, নাচ, ঘরে ঘরে পিঠাপুলিসহ বিভিন্ন আয়োজন করে আনন্দ করেন চা শ্রমিকরা।

চা-শ্রমিক নেতা রাম ভোজন কৈরী সিলেট টুডে কে জানান, আমেদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে “ফাগুয়া” একটি বৃহত্তম অনুষ্ঠান। “ফাগুয়া” উপলক্ষে আনন্দের জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছে সব চা বাগানে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত