দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৬ মার্চ, ২০১৮ ১৩:৩৬

পথশিশুদের বিদেশি বন্ধু!

পুরো নাম হোন লুসিও বেনিনাতি, যদি তিনি  ব্রাদার লুসিও নামেই পরিচিত। তিনি ইতালিয় নাগরিক।এদেশে সবাই তাঁকে চেনে ‘ভাইয়া’ বলে। এবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি ২য় দফায়। প্রথম ১৯৮৮ সালে এসে ফিরে গিয়েছিলেন ৬ বছর পর। পরে আবার ২য় দফায় বাংলাদেশে আসার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১২ বছর। তবে বারবার বাংলাদেশে আসার পেছনে একটা টান কাজ করে। এর একটাই মাত্র কারণ, বাংলাদেশের পথশিশুদের কল্যানে কাজ করা।

ব্রাদার লুসিও বেনিনাতির বাবা এলিও আন্তোনিয়েত্তার একজন সাইনবোর্ড মিস্ত্রি ও মা ছিলেন একজন গৃহবধূ। নয় বছর বয়স থেকেই নিজের খরচ নিজেই চালাতে দোকানে কাজ করতে শুরু করেন লুসিও। তারপর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য চলে যান ইতালির মিলান শহরে। কাজ আর পড়া দুটো একসঙ্গে চালিয়েই সফলভাবে শেষ করলেন ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিপ্লোমা নেওয়ার কাজ। সেসবের পাট চুকিয়ে ২২ বছর বয়সে বাধ্য হয়েই যোগ দিতে হলো সেনাবাহিনীতে।

কিন্তু গোলাবারুদের গন্ধ আর গুলির শব্দ যে তাঁর ভাল লাগে না। তাই ১৯৭৮ সালে ছাড়েন এ কাজ। তখনই তাঁকে পেয়ে বসে মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা। তখন থেকেই লুসিও যোগ দিলেন সেবকদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা বিষয়েও নিলেন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ। এবার শুধু মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার পালা। তাই পথশিশুদের জীবনমানের উন্নয়ন ও তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেই গড়েছেন ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’ নামের ছোট্ট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

তবে লুসিও বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগে ব্রাজিলে একটি সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাত বছর সেই দেশের পথশিশুদের জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নামটা নাকি তিনি ইতালির নেপলসেই বসে শুনেছিলেন। তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারনা ছিল বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন হয় এখানে। মানে এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পন্ন দেশ।

কিন্তু তার এ ধারনা বদলে যায় কয়েক বছর পরেই। তখন তিনি জানতে পারেন, বাংলাদেশ শুধু ঘূর্ণিঝড়ের দেশ নয়, বরং এটি একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের মানুষের বসবাস। তখনই বাংলাদেশ নামটা তাঁকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে। আর তাই ১৯৮৮ সনে সুদূর ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেই চলে যান দিনাজপুরে।

তবে সেখানে গিয়ে তিনি হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি দেখেন বাংলাদেশ একটি দেশের তুলনায় মানব ভার বহন করে চলছে বেশি। চারিদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। এছাড়াও একদিকে রাস্তার পাশ ঘেঁষে শুয়ে থাকে মানব সন্তান অন্যদিকে সুউচ্চ অট্টালিকার সারি।

ঠিক তখনই তিনি ছিন্নমূল গরিব বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করে দেন বাংলাদেশে। প্রথমে বেশ কিছু দিন তিনি দিনাজপুর-ময়মনসিংহের রেলস্টেশনগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের নিয়ে এ দেশের মাটিতে কাজ শুরু করেন। এভাবে দীর্ঘ ৬ বছর কাজ করার পর হঠাৎ করেই ডাক আসে ব্রাজিল থেকে। আর সে সুবাদে তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে পাড়ি জমান ব্রাজিলের রাজধানী সাওপাওলোতে।

তখনকার ব্রাজিলের অবস্থা হয়তো বাংলাদেশের তুলনায় আরো করুণ মনে হয়েছিল তাঁর কাছে। আর তখনকার বাস্তবতাটিও ছিল ঠিক তেমনি। আসলেই তখন সেখানকার অবস্থা বাংলাদেশের থেকে আরো অনেক বেশি করুণ ছিলো। সেখানে শিশু-কিশোররা প্রায় সবাই কোনো না কোনো ক্ষতিকর মাদক নেশায় আসক্ত। এছাড়াও অগণিত শিশু-কিশোরদের রাত-দিন কাটে রাস্তা বা ফুটপাতে শুয়ে বসে।

বাংলাদেশের মতো সেখানেও লুসিওর জীবন শুরু হয় সেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা। সেখানে প্রায় ৭ বছর কাজ করার পর ফের তাঁর মন কেঁদে উঠে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য। আর ঠিক তখনই লুসিও ব্রাজিলের পথশিশুদের দেখার ভার তুলে দিলেন তাঁর সহকর্মীদের হাতে। তখনও ব্রাজিলে রয়ে যায় তাঁর অনেক অসমাপ্ত কাজ। কিন্তু কি করা তিনি যে বাংলাদেশ আসবেনই। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তাঁর আর বাংলাদেশে আসা হয়ে উঠলো না। তাই কি আর করা, চলে গেলেন ভারতে।

এদিকে লুসি থেমে থাকার পাত্র নন। চালিয়ে যান তাঁর বাংলাদেশ আসার মিশন। অবশেষে ২ বছর চেষ্টা করার পর ২০০৬ সালের মে মাসে লুসিও পেয়ে যান বাংলাদেশ আসার অনুমতি। এবার বাংলাদেশে এসেই প্রথম চার মাস এসব নিয়ে না ভেবে শুধু বাংলা শিখলেন রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটের মণিপুরিপাড়া নামক এলাকার একটি স্কুলে। তারপর থেকেই কিছুটা বাংলা বলেতে পারেন তিনি। তবে তাঁর বাংলা শেখার পেছনে একটা যুক্তিযুক্ত কারন রয়েছে। এটা হচ্ছে পথশিশুরা তো আর তাঁর মতো ইংরেজি বলতে পারে না। বাধ্য হয়েই তাঁকে শিখতে হয় বাংলা। তখন তিনি আর সময় নষ্ট না করে ২০০৭ সাল থেকেই শুরু করেন তাঁর পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ।

তবে তখন তিনি ঢাকাতেই থাকতেন আর সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতেন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কগুলোতে। তাঁর দেখাদেখি অনেক বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীও নাম লিখিয়েছে পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের খাতায়। লুসিওর নিজ হাতে গড়া ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’ নামের ছোট্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কাজ শিশুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে তাদের মন ভাল রাখা, ওষুধপথ্য দেওয়া, খেলার ছলে শিক্ষা, প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়া।

হয়ত লুসিওর এখন আর ব্রাজিলে কাজ করা হয় না, কিন্তু পুরনো সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক এখনো আছে। কেনইবা থাকবে না! ব্রাজিলের জন্য তো তিনি কম কিছু করেননি।

টানা ১০ বছর কাজ করার পর এবার লুসিওর সিলেট মিশন। তিনি সিলেটে এসেছেন মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস হবে। এরই মধ্যে কেড়েছেন সিলেটের পথশিশুদের মন। খুলেছেন তিনটি স্কুল। যার মধ্যে একটি কাজিরবাজার সেতুতে আরেকটি সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে ও অন্যটি কালীঘাটে। বেশ কিছুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে চলে ব্রাদার লুসিওর এই সেবা সংগঠনটি।

যাই ব্রাদার লুসিও'র সাথে দেখা করতে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। দেখাও হয় তাঁর সাথে। সেখানে লুসিওর ক্লাস নেয়ার কথা রয়েছে। যথারীতি ক্লাসের দিন বিকেলের আগেই গাট্টিপেট্রা নিয়ে হাজির হন ব্রাদার লুসিও। এসেই তিনি স্টেশনের একটা কোণায় কিছুটা জায়গা লাল রশি দিয়ে ঘিরে ফেলেন। রশির সঙ্গে ছোট ব্যানার। যাতে লিখা রয়েছে ‘পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ চলছে।’  তার ভিতরে লুসিও এবং তার দুইজন স্বেচ্ছাসেবক। সেখানে তাঁকে ঘিরে বাচ্চাদের ভিড়। আর একটা কোণায় শিক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স ও খেলার সরঞ্জাম।

রশির ভেতরে ত্রিপল বিছিয়ে সেখানে রাখা আছে কিছু চিত্রকর্ম। আর সবাই তখন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেসময় লুসিও তাদের শেখাচ্ছিলেন ‘একতাই বল’। ততক্ষণে তার আশেপাশে প্রাপ্তবয়স্ক বেশ কয়েকজন কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন। তাদের দিকে আবার হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থণার ভঙ্গি করে তিনি বাংলায় বলতে লাগলেন, ‘ভাইয়া, দয়া করেন। এখন যান। আমাদের জন্য অসুবিধা হয়। একটু দয়া করেন। এটা শুধু বাচ্চাদের জন্য।’

সবাই যাবারপর তিনি তাঁর থলে থেকে বের করেন নানান রং-বেরঙের খেলনা। রং পেনসিলের বাক্স। বর্ণ শেখার রংদার ছবিওয়ালা বই। এগুলো তুলে দেন বাচ্চাদের হাতে। এগুলো নিয়ে কেউ পড়ে, কেউ রং পেনসিল দিয়ে আঁকিবুকি করে। আর আরেক পাশে লুসিও তাঁর ওষুধ পথ্যের বাক্স খুলে বসেছেন। এর আগে লুসিও সকল বাচ্চাদের হাতে টুকন তুলে দেন ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তার তিনি নিজেই। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক জামান, খুরশিদা, রায়হান ও সুমন তাদের দল নিয়ে কাগজে আঁকা ও রঙ দিয়ে ছবি আঁকা শেখাচ্ছিলেন।

ছবি আঁকাআঁকি শেষ হবার পর রশি দেয়া সীমানা প্রাচীরের ভেতরে একপাশে জামানের নেতৃত্বে থাকা খেলাধুলার জায়গায় খেলছে শিশুরা, খুরশিদার নেতৃত্বে অন্য পাশে আছে পড়াশোনার জন্য নির্ধারিত জায়গা পড়ছে অন্যরা আর আরেকপাশে বসে বাকি শিশুদের আদব-কায়দা শেখাচ্ছিলেন সুমন। আর ব্রাদার লোসিও একপাশে বসেছেন ডাক্তারি ডিসপেনসারি নিয়ে।

এভাবে আলাদা আলাদা জায়গা নিয়ে একেকজন একেক রকমের পরিচর্যা দিচ্ছেন পথশিশুদের। এতে করে কোন বাড়তি চাপ পড়ছে না শিশুদের উপর।

এবার শুরু রোগী দেখা। প্রথম রোগীর নাম রাসেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'বলতো তোমার কি কি সমস্যা? কোথায় যেন কেটে গেছে বলেছিলে'? ১০ কি ১১ বছর বয়সী হবে রাসেল! সে তার মাথার ক্ষতস্থানটি দেখাল লুসিওকে। তখন তিনি শুরুতে তুলো দিয়ে পরিষ্কার করেন ক্ষতস্থান। তারপর কি যেন একটা মলম লাগান।

পরের সিরিয়াল অনুযায়ী টুকন নাম্বার ধরে ডাকলেন লুসিও। রোগীর নাম শামিমা। তার পায়ে পুরাতন কাটার দাগ। সে দাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে পায়ের গোড়ালির উপর। লুসিও একটা ওয়েট টিস্যু দিয়ে ধীরেসুস্থে ঘষেঘষে পরিষ্কার করেন সব। তারপর পিঠ চাপড়ে শামীমাকে বিদায় করে পরের রোগীকে ডাকেন।

পরের রোগীর সমস্যার সমাধান করাটা তাঁর জন্য একটু কঠিন বলেই মনে হলো। কিন্তু তিনি না ঘাবড়ে সচেতনতার সাথেই দেখলেন। রোগীর নাম মুরাদ। তার বয়স ৮ কি ৯ হবে! তার সমস্যা দাঁতে। তিনি আগে তাকে কুলকুচো করতে বললেন। তারপর তিনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তার দাঁতে একটা মলম লাগিয়ে বললেন আজকের জন্য তোমার দাঁতে আর ব্যথা করবেনা। তবে কাল তোমায় নিয়ে আমরা দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবো, বলে তাকে বিদায় দিলেন। পরে ব্রাদার লোসিওর নেতৃত্বে সব পথশিশু খেলাধুলায় অংশ নেয়।

শিশুরা ব্রাদার লোসিওর নাম পুরোটা বলতে পারে না। ওরা বলে 'লুসি ভাই'। এখানকার প্রায় সব পথশিশুই লুসি ভাইকে চেনে। দেখা হলেই দৌড়ে এসে বলে তাদের রোগ-শোকের কথা। আর এভাবে পথশিশুদের নিয়ে মেতে থাকেন লুসি ভাই।

এরই মধ্যে লুসিওর পূর্ব পরিচিত একজন বাচ্চাদের জন্য কিছু চকলেট কিনে নিয়ে এসে তাঁর হাতে দেন। এবার পালা এই চকলেটগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। তিনি এগুলোকে বিতরণের জন্য বাচ্চাদেরকে ডাকলেন এবং বললেন তোমাদের জন্য আজকে পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। এই বলে তিনি বাচ্চাগুলোদের সারিবদ্ধ করে লাইনে দাঁড় করিয়ে বললেন, এখন সবাই গান শোনাবে আর যে জিতবে সে পুরস্কার পাবে। একে একে সবাই গান পরিবেশন করে। এবার পালা পুরস্কারের। কথামত যে সবচাইতে ভালো করেছে সেই পেয়েছে অধিকাংশ চকলেট। তাই বলে অন্য বাচ্চাদেরকে তিনি হতাশ করেন নি। সবাইকে তিনি একটি করে চকলেট দিয়ে বললেন জাকিরের মতো যদি সবাই ভাল করে গান গাইতে পারো তাহলে তার মতো তোমরাও জিততে পারবে পুরস্কার।

প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম ব্রাদার লুসিওর কাজ। এবার কথা হয় ভিনদেশী ব্রাদার লুসিওর সাথে। তবে লুসিও ভিনদেশী কথাটা মানতে নারাজ। তিনি মনে করেন, তিনি বাংলাদেশেরই একজন। বাংলাদেশকে নিজের দেশ ভাবেন লুসিও।

সে সময় তিনি বলেন, ‘সারা দিন আমি গরিব বাচ্চাদের মধ্যে থাকি। ওদের সেবা দিই। একটু চিকিৎসা করি। লেখাপড়া করাই'।

এই যে আপনি বাচ্চাদের ঘা আর খোসপাঁচড়া ঘাঁটেন এবং তাদের সাথে থাকেন আপনার খারাপ লাগে না? এমন প্রশ্নের জবাবে লুসিও পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'আমি যদি তাদের কাছাকাছি না থাকি তাহলে ওদের দুঃখ আমি কেমন করে বুঝব?’

এসব খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'নিজের দেশ থেকে মায়ের পেনশনের কিছু টাকা আসে। আর কিছু পাঠায় বন্ধু-বান্ধবরা। আর সিলেটের শুভ কামনার্থীরা কিছু দেন। তবে এ টাকা সাদা হতে হবে। আর চিকিৎসার জন্য সময়ে সময়ে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে চেয়ে চিন্তে ঔষধ এনে চলে এই সংগঠন'।

তিনি বলেন, 'আমি বাচ্চাদেরকে সেবা দিতে পারলে সুখ পাই। যত বেশি সেবা দিতে পারি তত বেশি সুখ পাই।’

বাতিল কাগজ কুড়িয়ে, আস্তাকুড়ের ময়লা ঘেঁটে যাদের সময় কাটে, যাদের দেখার কেউ নেই, তাদের জন্য তিনি সঁপেছেন নিজের সব। পথশিশুরা জানে, লুসিও ভাইয়ের আগমন মানেই মহা আনন্দময় এক উপলক্ষ। এমনকি লুসিও ভাই নামটাও তাদের দেওয়া। মানুষটার গায়ের রং তাদের মতো নয়। বাংলা শিখেছেন তিনি বহু সাধনা করে। কিন্তু এই লুসিও ভাই-ই বুঝতে পারেন তাদের অন্তরের ব্যথা। শরীরের ঘা, খোসপাঁচড়া আর আঘাত নিয়ে ওরা যখন কাতরায় তখন এই সাদা মনের সাদা মানুষটিই এসে দাঁড়ান ওদের পাশে।

বর্তমানে 'সাদা টাকার' দেশীয় অনুদানে পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ছিন্নমূল শিশুদের সাথে খেলাধুলা, প্রাথমিক চিকিৎসা, পুনর্বাসনে সহায়তা ইত্যাদি দিয়ে থাকেন তিনি।

এতো কিছু শোনার পর জানতে চাইলাম তাঁর চোখে বাংলাদেশটা কেমন? একজন ইতালিয়ানের মুখে দেশ নিয়ে ইতিবাচক অনেক কথা শুনে নিজের অনেকটা গর্ব হলো। কিন্তু শেষে বললেন, 'দেশটাকে সব নাগরিক আপন ভাবেন না! এখানে এটাই একটা বড় ফারাক আমার দেশের (ইতালি) সাথে।'

লোসিও এমন একদিনের স্বপ্ন দেখেন, যেদিন কোন শিশু পথে থাকবে না। পৃথিবীতে জন্মানো প্রত্যেকটা শিশু পৃথিবীর সন্তান। এই পৃথিবীতে আছে সবার সমানভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার। ব্রাদার লোসিও বলেন, সব শিশুর সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত