এস আলম সুমন

১২ মে, ২০১৮ ১২:৪২

'ঘুম থেকে ওঠে চোখ মেলতে পারি না, চোখে রক্ত জমে থাকে'

বিরল রোগে আক্রান্ত পাবেল

‘আগে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতো, এখন চোখ দিয়ে রক্ত ঝরে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে চোখ মেলতে পারি না, চোখের ভিতর রক্ত জমে থাকে। চোখে অসহ্য জ্বালাপোড়া করে। বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখালেও ডাক্তাররা আমার রোগের কারণ জানাতে পারেননি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমার পড়াশুনাও বন্ধ’। এভাবেই আক্ষেপ করে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরার মত বিরল রোগে আক্রান্ত ১৫ বছরের কিশোর পাবেল আহমদ কষ্টের কথা জানায়।

পাবেল মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাবনিয়া গ্রামের আব্দুস শহিদের ছেলে। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে সে ছোট। সে একই এলাকার বাবনিয়া হাসিমপুর নিজামিয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

সরেজমিনে পাবেলের গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, আমি আমার অজানা এই রোগ নিয়ে আতঙ্কে থাকি সব সময়।

তিনি বলেন, রক্ত হঠাৎ ঝরে তাই ভয়ে বাইরে বের হতে পারিনা। আমার পড়াশুনাও বন্ধ রয়েছে। আমি আবারো স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাই।

পাবেলের মা তৈয়বুন বেগম জানান, প্রায় তিন বছর আগে থেকে তার (পাবেলের) নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতো। এ অবস্থায় কুলাউড়ায় ডা. দেবাশীষ বসুর চিকিৎসা নেন। ডাক্তারের দেয়া ঔষধ ব্যবহার করায় রক্তক্ষরণ বন্ধ থাকে। হঠাৎ করে ৮ মাস আগে নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

তৈয়বুন বেগম জানান, রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পরে সিলেটে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে সিটিস্কেনসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট করানোর পর ডা. নুরুল হুদা নাইম জানান পাবেলের নাকের ভিতরে মাংসপেশি বেড়েছে এবং নাকের হাড় বাকা।

পরবর্তীতে ৫ মাস আগে সিলেটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডা. হাফিজুর রহমানের তত্বাবধানে নাকের ভিতর দুটি অস্ত্রোপচার করানো হয় তার। অপারেশনের পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। কিছুদিন পর পর নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতো।

পরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে নাক, মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণের সাথে নতুন করে চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তারের ঔষধে কোন কাজ হচ্ছিলনা। সাত আটদিন পরপর চোখ নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।

একই মাসের ৫ তারিখ ঢাকায় ডা. প্রাণগোপাল দত্তের কাছে পাবেলকে নিয়ে যাই। তিনিও তার মেডিকেল টেস্ট করান। টেস্টে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তার চোখে জ্বালাপোড়া করে। চোখ লাল থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের ভিতর রক্ত জমাট হয়ে থাকে। তাকে নিয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

পাবেলের মা বলেন, আমার অর্থের সহযোগিতা প্রয়োজন নেই। চিকিৎসার জন্য ছেলেকে বিদেশেও নিয়ে যেতে রাজি আছি। শুধু জানতে চাই কি রোগ এবং কোথায় গেলে চিকিৎসা হবে ছেলের।

পাবেলের এ রোগের বিষয়ে জানতে কথা সঙ্গে কথা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জালাল হোসাইনের সাথে, তিনি বলেন এই রোগটি বিরল। এমন রোগ আগে কখনও দেখিনি বা শুনিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত