নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:২৭

সংযোগ সড়ক না থাকায় তিন বছর ধরে অব্যবহৃত কালনী সেতু

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী-কলকলিয়া সড়কে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় কালনী সেতু। প্রায় তিন বছর আগে শেষ হয় কালনী নদীর ওপর এ সেতুর নির্মাণকাজ। তবে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় অব্যবহৃত পড়ে আছে সেতুটি।

হাওড়পাড়ের দিরাই উপজেলার সঙ্গে সিলেট ও ঢাকার সড়ক দূরত্ব কমাতে সেতুটি নির্মিত হলেও তা স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। জমি অধিগ্রহণ, নকশা নিয়ে জটিলতা আর বিশ্বব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নেয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ আটকে আছে বলে জানা গেছে। ওই সড়ক নির্মাণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দিরাইয়ের প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২১০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। শুরুতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ২২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

বলা হয়েছিল, এ সেতু নির্মিত হলে কালনী-কলকলিয়া সড়কটি দিরাই থেকে পূর্ব দিরাই হয়ে যাওয়া সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে যুক্ত হবে। ফলে দিরাই-শাল্লার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটের দূরত্ব কমে আসবে। এছাড়া কালনী নদীর পূর্বপাড়ে পূর্ব দিরাইয়ের দেড় লাখ অধিবাসী সরাসরি সড়কপথে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। তবে তিন বছর আগে নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এ পর্যন্ত কালনী-কলকলিয়া সড়কের কাজ শুরু না হওয়ায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এতে করে যাতায়াতের দুর্ভোগও কমছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ আটকে যায়। পরে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে আপত্তি জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা হাওড়ের মধ্যে হওয়ায় সেখানে সড়ক নির্মাণের ফলে হাওড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। আপত্তির কারণে নতুন করে সড়কের নকশা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এলজিইডির স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে এ প্রকল্পটি ছিল বিশ্বব্যাংকের অধীনে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অর্থ ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক। এতে আটকে যায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ।

পূর্ব দিরাইয়ের অধিবাসী জয়নাল আবেদীন সর্দার বলেন, কালনী সেতু থেকে জগদল-হোসেনপুর-কলকলিয়ার ২০ কিলোমিটার সড়কের জমি অধিগ্রহণ এখনো শেষ হয়নি। ফলে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না।

জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী বেগ বলেন, হাওড়পাড়ের এ দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে আছে। সেতু ও সড়ক চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতো। দিরাই ও শাল্লার মানুষের দুর্ভোগ কমে আসত। কিন্তু এখনো এ সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের কাজ না হওয়ায় সেতুটিও কোনো কাজে আসছে না। কেবল সেতু দেখেই সান্ত্বনা খুঁজতে হচ্ছে আমাদের।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বলেন, ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির জন্য ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন সড়ক নির্মাণকাজ বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি প্রথমে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের আওতাধীন ছিল। কিন্তু বিলম্বের কারণে তারা অর্থ ফিরিয়ে নেয়। এখন প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্পের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনেই সড়কের কাজ হবে। তবে কাজ শুরু হতে কিছুটা দেরি হবে।

প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা বর্তমানে দিরাই-শাল্লা এলাকার সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নেয়ায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরুতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পভুক্ত হওয়ায় সে জটিলতার অবসান হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই সড়কের কাজ শুরু হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত