মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

০৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:১২

‘তোর বাপকে নিয়ে আয়, সে আমাকে কী করবে’ (ভিডিও)

২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার অ্যানি। স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে মেয়ের বায়না মেটাতে তাকে নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি ফুচকার দোকানে ফুচকা খেতে বসেছিলেন অ্যানির মা। এসময় পাশে থাকা জিসান নামের একটি ছেলে হঠাৎ করেই মায়ের সাথে বসে ফুচকা খেতে থাকা স্কুল পড়ুয়া মেয়েটিকে বিশ্রী ভাবে উত্যক্ত করতে থাকে এবং অনবরত কিশোরীটির ছবি তুলতে থাকে।

ছেলেটির এ বিশ্রী ব্যবহার কিশোরীটির মা সইতে না পেরে এর প্রতিবাদ করলে জিসান অ্যানির মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেন। এর একপর্যায়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী অ্যানিরও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তখন সেও তার মায়ের সাথে প্রতিবাদ শুরু করে। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে কিশোরীটি ছেলেটিকে থাপ্পড় মারতে মারতে শার্টের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে প্রধান সড়কে।

গত চার দিন থেকে এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার সদরে অবস্থিত পৌর পার্কে।

ভিডিওটিতে আরও দেখা যায় অ্যানিকে উত্যক্ত করা সেই ছেলেটির সাথে আরও কয়েকজন বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে একজন মৌলভীবাজার ছাত্রলীগের এক কথিত নেতাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে অ্যানি সেই ছেলেটির হাতের মোবাইল কেড়ে নেয় এবং মাটিতে আছাড় দিয়ে মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে। এক পর্যায়ে উত্যক্তের শিকার হওয়া কিশোরীটি উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সেই ছেলেটিকে (বন্ধু) বলে ‘তোর বাপকে নিয়ে আয়, সে আমাকে কী করবে।’

উত্যক্তের শিকার হওয়া অ্যানি মৌলভীবাজার দি ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। সে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। অ্যানি সদর উপজেলার মাতারকাপন এলাকার মো. আকলিম মিয়ার মেয়ে। আর অ্যানিকে উত্যক্ত করা এবাদুর রহমান জিসান সে সদর উপজেলার বারন্তি গ্রামের বাসিন্দা। সে শাহ মোস্তফা কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র।

এদিকে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরপরই সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি এই অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত জিসানের সাথে যোগাযোগ করলে সে এই প্রতিনিধিকে জানায়, অ্যানির সাথে আমার এক বছরের ওপরে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু ৮ মাস পূর্বে আমাদের এ সম্পর্কে ফাটল ধরে।

সে আরও জানায়, ঘটনার দিন পৌর পার্কের পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ আমায় ডেকে নিয়ে কলার চেপে ধরে এবং আমার বন্ধুর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে।

জিসানের এ বক্তব্যকে সম্পূর্ণ বানোয়াট জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দি ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক জানান, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি দেখে আমরা আমাদের ছাত্রীটিকে চিনতে পারি। আর ঘটনার পরের দিনই আমরা অ্যানিকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়েছিলাম।

অ্যানির বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক অ্যানির বরাত দিয়ে বলেন, অ্যানিকে উত্যক্ত করায় তার মা প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু ছেলেটি মায়ের সাথেও খারাপ ব্যবহার শুরু করায় করায় অ্যানি ছেলেটির ওপর চড়াও হয়। তারপর পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়।

সেই শিক্ষক আরও জানান, পরে জানতে পেরেছি পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের সামনে দুপক্ষের সমঝোতা হয়। পরবর্তীতে ছেলেটিকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে তাদেরকে আমার অফিসে নিয়ে আসি এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে ব্যাপারটি মীমাংসা করে দিই।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন: https://youtu.be/U-Ok1DwOSHU

ভিডিও :

আপনার মন্তব্য

আলোচিত