কুলাউড়া প্রতিনিধি

১৫ জুন, ২০১৯ ২১:৩৮

কুলাউড়ায় বিএনপির কাউন্সিল স্থগিত, নাসের রহমানের পদত্যাগের দাবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে জেলা বিএনপির নির্দেশে হঠাৎ করে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে পূর্বনির্ধারিত উপজেলা বিএনপির এ সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করায় অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এসময় তারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি এবং জেলা সভাপতি এম নাসের রহমানের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এদিক হঠাৎ কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণায় সম্মেলনকে ঘিরে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী এবং কাউন্সিলের ভোটারদের জেগে ওঠা উৎসাহ উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে এবং প্রায় এক দশক দশক পর দলীয় বিভক্তি থেকে ঐক্যের যে সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিলো সেটিও অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বিধাবিভক্ত উপজেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে দুই গ্রুপের নেতারা উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ৩০ মার্চ উপজেলা কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। এরপর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলন এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে পৌর কমিটি ও ১৩ টি ইউনিয়নের কমিটি গঠনের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেন।

পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১৫ জুন পৌর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৩ জন , সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন পদপ্রত্যাশী মনোনয়ন কিনেন। সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়। গত ১৪ জুন শুক্রবার বিকেলে সভাপতি পদপ্রার্থী সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জয়নুল ইসলাম জুনেদ নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।

পূর্বনির্ধারিত শনিবার দুপুর আড়াইটায় উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠান আয়োজনের পূর্ব মুহূর্তে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট এএনএম আবেদ রাজা ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়াকে জেলা কমিটির সভাপতি এম নাসের রহমান মৌলভীবাজারে ডেকে নিয়ে তাদের হাতে কাউন্সিল স্থগিতের চিঠি তুলে দেন। এদিকে কাউন্সিল স্থগিতের খবর অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং কাউন্সিল সম্পন্নের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এএনএম আবেদ রাজা সম্মেলন অনুষ্ঠানে এসে জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত কাউন্সিল স্থগিতের নির্দেশের চিঠির কথা জানান।

এসময় সম্মেলনে আসা আবেদ রাজা বলেন, জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান ডেকে নিয়ে চিঠির মাধ্যমে কাউন্সিল স্থগিতের নির্দেশ দেন। আমি জেলা সভাপতির কাছে (নাসের রহমানের কাছে) হঠকারী এই সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। এসময় সেখানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারাও আমাকে কোন সদুত্তর দেননি।

তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ শুক্রবার নিজের সভাপতি পদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আবেদন দিয়ে জেলা কমিটির সাথে আঁতাত করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিল স্থগিতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আমি জেলা সভাপতির হঠকারী সিদ্ধান্তের এমন অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এসময় জেলা সভাপতিকে সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উনার মতামত জানানোর অনুরোধ করি এরপরও তিনি কোন ধরণের শিষ্টাচার দেখান নি।

গত ৩০ মার্চে জেলা কর্তৃক কুলাউড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর এই কাউন্সিলকে ঘিরে শত কষ্ট, মামলা-হামলা, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে পৌর ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের আবেগকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ অপমানিত করে শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছা স্বাধীন কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা দিলেন জেলার সভাপতি এম নাসের রহমান। আমি জেলা সভাপতির পদত্যাগ দাবি করছি। পাশাপাশি উনার পদত্যাগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন করবো।’

এছাড়াও তিনি ‘এই কাউন্সিল প- করার ষড়যন্ত্রের জন্য কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদকে দায়ী করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।’

এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও জেলা সভাপতি এম নাসের রহমানের পদত্যাগের দাবি এবং কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ মোবাইলে বলেন, আমার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এবং আমাকে সম্মেলনের কোন আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি তাই আমি সভাপতি পদ থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করেছি। পরে আমি আমার স্ত্রী এবং জেলা নেতৃবৃন্দের পরামর্শে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই জেলা বিএনপির সভাপতিসহ সকল নেতৃবৃন্দকে। পরে তারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি আমি জানিনা।

কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদের বক্তব্যের ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এএনএম আবেদ রাজাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য। এই সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনে উনারও দায়িত্ব রয়েছে। তাই উনাকে আলাদা আমন্ত্রণপত্র দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আহ্বায়ক হিসেবে উনি সবাইকে দাওয়াত দিবেন।

কি কারণে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল স্থগিত করা হলো এ ব্যাপারে জানতে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত