সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ জুন, ২০১৯ ০১:২৫

বেঁচে নেই আইএসে যোগ দেওয়া সিলেটের একই পরিবারের সেই ১২ জন

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামাক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দেওয়া সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের প্রবাসী সেই পরিবারের ১২ সদস্যই মারা গেছেন। এমন তথ্য প্রকাশ করছে বৃটিস গনমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল।

সংবাদপত্রটি দাবি করেছে- পুরো পরিবারের মৃত্যদের মধ্যে ১১, পাঁচ ও এক বছরের শিশুরাও ছিলো। যারা আইসিসে যোগ দিতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ হয়ে তুরস্কের পথ ধরে সিরিয়া পৌঁছায়।

‘মান্নান পরিবার’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-

– পরিবারটি যখন যুক্তরাজ্য ছেড়ে আইসিসে যোগ দিতে সিরিয়া যায় তখনই বিশ্বের নজরে পড়ে।
– ২০১৫ সালের মে মাসে পরিবারটি বৃটেন থেকে প্রথমে বাংলাদেশে আসে এখানে থেকে তুরষ্ক হয়ে সিরিয়া পৌঁছায়।
– সিরিয়া পৌঁছানোর দুই মাস পরে মান্নান পরিবারের সদস্যরা একটি বার্তায় ইসলামিক স্টেটের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে।
– লন্ডনে তাদের অন্য আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- মান্নান পরিবারের সকলেই মারা গেছে।
– তাদের মধ্যে সাত জন বিমান হামলায় মারা গেছে, আর তিন ভাইকে আইসিসের জেহাদে অংশ নেওয়ায় হত্যা করা হয়েছে।
– পরিবারটির প্রধান মুহাম্মদ মান্নান ও তার স্ত্রী মিনারার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

পরিবারটি যুক্তরাজ্যের লুটনে বাস করতো। সেখানেই বাস করছেন মান্নানের আগের একজন স্ত্রীর ঘরের ছেলে সেলিম। তার বরাত দিয়ে মেইল অনলাইন বলছে, পরিবারটির সকলেই এখন মৃত।

‘আমরা অনেকদিন ধরেই তাদের কথা জানার চেষ্টা করে আসছি, আর সম্প্রতি সিরিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, ওরা কেউ বেঁচে নেই,’ ভাষ্য সেলিমের।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাওয়ে এই পরিবারটির আদি নিবাস। ০১৫ সালের ১০ এপ্রিল পরিবারের ১২ সদস্যকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। একমাস পর ১১ মে তুরস্ক হয়ে তাদের যুক্তরাজ্যে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তুরস্ক থেকে তারা কথিত জিহাদের জন্য চলে যায় সিরিয়ায়।

ওদিকে তারা বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে যখন ব্রিটেনে ফিরছিলো না, তখনই উদ্বিগ্ন আত্মীয়-স্বজনরা তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশে রিপোর্ট করে।

সিরিয়া পৌঁছানোর দুই মাস পরে পরিবারটি এক বার্তায় ঘোষণা করে যে তারা ইসলামিক স্টেটের সমর্থন জানিয়ে ওই দেশে অবস্থান করছে। বার্তাটিতে বলা হয়- ‘আমরা এখন সুখি, এমন একটি দেশে আমরা এখন বাস করছি যেখানে কোনও দুর্নীতি নেই, মনুষ্য সৃষ্ট আইনের নিষ্পেষণ নেই, শরিয়া আইনেই যার শাসন চলছে।’

বার্তাটিতে আরও বলা হয়, ‘হ্যাঁ, আমাদের ১২ জনের পরিবারের সবাই এসেছি, আর এই সংখ্যাটি শুনে কেনো আপনারা আহত হচ্ছেন, যখন বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে হাজার হাজার মুসলিম প্রতিদিন দীর্ঘ পথ, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে আসছে এই ইসলামিক স্টেটে’।

মান্নানই ছিলেন যুক্তরাজ্য থেকে আইসিস সমর্থনে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কোনও ব্রিটিশ। এসময় আঙ্গুল তুলে আইসিসের সমর্থন জানানো একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়। তবে ৭৫ বয়সী এই বৃদ্ধ বাবা তখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। আর ওই ছবিটি প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে রাক্কায় তার মৃত্যু হয়। পরে তার স্ত্রী মিনারাও একই নগরীতে মারা যান। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

পরিবারের অন্য সদস্যরা সিরিয়ার অন্য জিহাদীদের সাথে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তবে তাদেরও শেষ পরিণতি ঘটে গত বছর বাগুজে। ইসলামিক স্টেটের হাতে থাকা এই শেষ ভু-খণ্ড দখলে যে যুদ্ধ চলছিলো তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মান্নানের অপর ছেলে মোহাম্মদ আবুল কাশেম (৩১)। সেখানেই ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদি গ্রুপটির শেষ পরিণতি ঘটে। বারগুজ থেকে পালানোর পথে তখনকার উপযুপুরি বোমা হামলায় পড়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা নিহত হন। এরা হচ্ছেন মান্নানের মেয়ে রাজিয়া খাতুন, ২১, ছেলে মোহাম্মদ সালেহ হোসেন, ২৬, ও তার স্ত্রী রোশনারা বেগম, ২৪, তাদের তিন সন্তান ও মান্নানের আরেক পুত্রবধু সাইদা খানম, ২৭।

মান্নানের এক চাচাতো ভাই আবদুল খালিদকে উদ্ধৃত করে মেইল অনলাইন জানায়, বারগুজ থেকে পরিবারের সদস্যদের পালানোর চেষ্টা এবং বোমা হামলায় তাদের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেই জেনেছেন।

লুটনের একটি মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন মোহাম্মদ মান্নান। সেখানে প্রায় সকলেই জানেন, পরিবারটির সকল সদস্যই এখন মৃত। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল হোসেনকে উদ্ধৃত করেছে ডেইলি মেইল। তিনি বলেন, যখন জানতে পারলাম পরিবারটি সিরিয়া চলে গেছে, আমরা খুবই মর্মাহত হলাম। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, পরিবারটি এমন কিছু করতে পারে। আমরা যে মান্নানকে চিনতাম তার সঙ্গে এই আচরণ কোনওভাবেই মিলছিলো না।‘

একজন বললেন, ‘এখানে এখন সকলেই পরিবারটির পরিণতির কথা জানে। আসলে বিষয়টি ভাবাই কঠিন ইংল্যান্ডে এমন নিরাপদ জীবন ছেড়ে কেউ গোটা পরিবার নিয়ে সিরিয়ার এমন বিপদসংকুল পরিবেশে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে ঘরের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত