নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ থেকে ফিরে

০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:৩৩

আসামে অস্থিরতা, জকিগঞ্জে উৎকণ্ঠা

ভারতের আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করেছে শনিবার। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন দেশটির প্রায় ১৯ লাখ বাসিন্দা। এনিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে আসাম সীমান্ত লাগোয়া সিলেটের জকিগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে।

ওপাড়ের 'অস্থিতিশীল' পরিস্থিতির সুযোগে অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। এজন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ সরকারকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান সীমান্তবর্তী ওই উপজেলার বাসিন্দাদের।

সিলেটের সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জ। সুরমা নদী ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ ও কাছার আর। আর এপারে বাংলাদেশের সিলেট জেলার জকিগঞ্জের প্রায় ৫৪ কিলোমিটার সীমান্ত। এছাড়াও আসাম রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত সখ্যতা রয়েছে সিলেটের কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সাথে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার অবস্থান আসামের ওপাড়ে।

রোববার দুপুরে জকিগঞ্জ সীমান্তের বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে কথা হচ্ছিলো স্থানীয় বাসিন্দা মো. মহসিনের সাথে। তিনি বলেন, ভারত সরকার একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত থেকে তাদের সরে আসা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এমনিতেই আমরা অনেক সমস্যায় রয়েছি। তার উপর নতুন করে কেউ এলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

স্থানীয় সাংবাদিক আল মামুন বলেন, আসামের ঘটনায় জকিগঞ্জের মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাগরিক তালিকা থেকে বাদ লোকজন সীমানা পেরিয়ে এই দিকে চলে আসতে পারে এমন শঙ্কা বিরাজ করছে সবার মধ্যে। সরকার এব্যাপারে তৎপর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আসামে এমন অস্থিরতার খবরে এরইমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে জকিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন। জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো. আবু নাসের বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে কেউ যাতে না আসতে পারে সেদিকে প্রশাসন কড়া নজরদারি রেখেছে। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে কেউ যাতে আতংকিত না হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথেও কথা বলেছে পুলিশ। তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয়।

জকিগঞ্জের ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বে রয়েছেন উপ পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অস্থিরতার সুযোগে যাতে কেউ অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

জকিগঞ্জের পৌর মেয়র মো. খলিল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ভারতে আভ্যন্তরীণ সমস্যা, আশাকরি ভারত সরকার এর সুষ্ঠু সমাধান করবেন। আমাদের জনগণ এ ব্যাপারে খুবই সচেতন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমা উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা সরকারের পাশে থাকবো।

এদিকে জকিগঞ্জের বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানান, সীমান্তে 'বাড়তি নজরদারি' কিংবা 'বিশেষ' নির্দেশনা নয়, এই সতর্কতা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ।

তিনি বলেন, আসামের নাগরিক তালিকা প্রকাশের খবর আমরা মিডিয়া থেকে জেনেছি। এব্যাপারে উপরের কোনো বিশেষ নির্দেশনা নেই। আমরা সীমান্তে নজরদারি করছি নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবেই।

তবে এরই মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম রাজ্য সরকার নিশ্চয়তা দিয়েছে, যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় নেই তাদেরকে বিদেশি বলে গণ্য করা হবে না। নব্বই দিনের মধ্যেই তারা আপিলের মাধ্যমে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত