সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১১:৫৯

তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের দুর্গে আবাসিক ভবনের খোঁজ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে অবস্থিত প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ঐতিহাসিক হলহলিয়া (হাউলি) দুর্গে দ্বিতীয় দফা খননকালে আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা আশা করছেন, আগামী দুই মাসে আরও অনেক প্রত্নবস্তুর হদিস মিলবে। যেগুলো এই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা কাজে অনেক সহায়ক হবে।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে দুর্গ খননের প্রাথমিক কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রথম দিনেই মিলে ৫০০ বছরের পুরনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রত্ন নিদর্শন।

সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেছিলেন, 'তাহিরপুরের লাউড়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেটি কয়েক যুগকে যুক্ত করবে।' দ্বিতীয় দফা খননে আবাসিক ভবন পাওয়া যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার বক্তব্যের সত্যতা মিলল।

মঙ্গলবার ড. আতাউর রহমান বলেন, প্রথম দফা খননে মাটির নিচে চারদিকে দেয়াল বেরিয়েছে। এর একদিকে ৫০ ফুট এবং অন্যদিকে ৭৫০ ফুট। দ্বিতীয় দফায় খনন শুরু হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। এরই মধ্যে প্রাচীন রাজধানীর আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই মাসে গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যাবে।

এখানে একটি জাদুঘর স্থাপনসহ অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও হবে। ড. আতাউর রহমান জানান, আগামী ১৩-১৪ মার্চ লাউড়ের দুর্গ পরিদর্শনে আসবেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সংস্কৃতি সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

ইতিহাস বলে, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। শ্রীহট্টের (সিলেট) তিন ভাগ তিনজন পৃথক রাজা বা নৃপতি শাসন করতেন। এর মধ্যে গৌড় রাজ্য, লাউড় রাজ্য ও জয়ন্তিয়া রাজ্য নামে তিন রাজ্যের রাজার অধীনস্থ ছিলেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ভূমিমালিক। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও আংশিক ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে অবস্থান ছিল লাউড় রাজ্যের। সে সময় লাউড়ের রাজধানী ছিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়।

হলহলিয়া নামের গ্রামে এখনও ওই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। কেশব মিশ্র সিংহ নামে একজন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কৌনজ গোত্র থেকে খ্রিস্টীয় দশম বা একাদশ শতকে তিনি লাউড় গড়ে তুলেন। পরে বিজয় মাণিক্য নামের একজন রাজা এখানে রাজত্ব করতেন। কারও কারও মতে, বঙ্গবিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতাড়িত ও পরাজিত সম্ভ্রান্তরা জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন।

লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপ-রাজধানী ছিল। এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষই লাউড়ের হাউলী, হলহলিয়া বা হাবেলী নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এখন এই দুর্গের ভগ্নাবশেষ দেখা যায়। প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মনোরম কারুকার্য দেখলেই বুঝা যায়, এক সময় এখানে কোনো সম্ভ্রান্ত রাজা থাকতেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত