হামিদুর রহমান, মাধবপুর

২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ০১:১১

কৃষিকাজের ট্রাক্টর ব্যবহৃত হচ্ছে পণ্যপরিবহনে, বাড়ছে দূষণ ও দুর্ঘটনা

হবিগঞ্জের মাধবপুরে চাষাবাদের জন্য কেনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো হয়েছে ট্রাক বা ট্রলি। এসব অবৈধ যানের অবাধ চলাচলের কারণে হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। বাড়ছে দুর্ঘটনা। লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ ট্রাক বা টলির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, কৃষি কাজের জন্য এসব ট্রাক্টর ক্রয় করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু, মাটি, কাপড়, তরিতরকারি ও ফার্নিচার পরিবহনের কাজে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ট্রাক্টর দিয়ে। জমি খুঁড়ে গ্রাম থেকে বালু বহন করে আনছে শহরে। পাশাপাশি ধুলাবালির কারণে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া আওয়াজ ও চলাচলে গ্রাম ও শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

বেপরোয়া গতি ও কানফাটা শব্দে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ২৮ ডিসেম্বর মাধবপুর-হরষপুর সড়কের সেউলিয়া ব্রিজ এলাকায় মাহেন্দ্র ট্রাক্টরের ধাক্কায় সিএনজি উল্টে পুকুরে পরে সিএনজির চালক ঘটনাস্থলে মারা যান এবং দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের মাধবপুর প্রতিনিধি গুরুতর আহত হব। তারপরও অবৈধ এই বাহনের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, দেশের কৃষি উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার জন্য এসব ট্রাক্টর বিদেশ থেকে আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। সরকারি সুযোগ পেয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে আমদানি করেন ট্রাক্টর। আর এসব ট্রাক্টর বিক্রি করে ইটভাটার মালিক, মাটি-বালু, কাঠ, লোহা ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকসহ পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে। ট্রাক্টরের চালকদের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না থাকায় এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে সহজেই কিনে আনেন ট্রাক্টর। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষিকাজের পরিবর্তে পরিবহন কাজে ব্যবহার করায় গ্রাম থেকে শহরেও ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ট্রাকের চেয়ে ট্রাক্টরের ভাড়া কম থাকায় এই বাহনের চাহিদাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

সরেজমিন মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ধুলাবালির কারণে সড়কের দুই পাশের বাড়ি ও গাছপালা ধুলায় তলিয়ে গেছে। কয়েক মিনিট পর পরই মাটি, বালি ও ইট ভর্তি একটি-দুটি করে ট্রলি বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে।

পথচারী আশরাফ আলী বলেন, মাধবপুর উপজেলার গড়ে উঠা বিভিন্ন ইটভাটার মালিকরা, বালু ব্যবসায়ীরা এসব ট্রাক্টর ব্যবহার করে রাস্তা-ঘাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট লাগে। পাশাপাশি ধুলার কারণে ১০ গজ দূরের কোনো কিছু চোখে পড়ে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তা-ঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এসব বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

মাধবপুর উপজেলা কমিশনার(ভূমি) আয়েশা আক্তার বলেন, এ ব্যাপারে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত