রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং

০২ মার্চ, ২০২০ ০০:৩৩

রেল দুর্ঘটনায় আহত বানিয়াচংয়ের সোহেল-নাজমাদের মানবেতর জীবন

কুমিল্লার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়া বানিয়াচংয়ের সোহেল ও তার পরিবারের চিকিৎসা অর্থের অভাবে আটকে আছে। চিকিৎসা করাতে সহায় সম্বল সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছে এই পরিবারটি।

অন্যদিকে এই দুর্ঘটনায় সোহেলের একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহার মৃত্যু হয়। তার এই মৃত্যুতে সরকার ঘোষিত এক লক্ষ টাকা আজ পর্যন্ত হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন আহত সোহেল। তবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে আহত পরিবারকে ২৫হাজার টাকা ও বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০হাজার প্রদান করা হয় তাদেরকে।

ঘটনার পরপরই রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে ১লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। মন্ত্রীর এই ঘোষণা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

রোববার (পহেলা মার্চ) বিকেলে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে দুর্ঘটনায় আহত সোহেল জানান, খুব কষ্ট করে আমাদের চলতে হচ্ছে। প্রথম দিক দিয়ে আমাদের চিকিৎসা পঙ্গু হাসপাতালে হলেও পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএইচ-এ আমার চিকিৎসা হয়। আর আমার স্ত্রী, ছেলে, শ্বাশুড়ির চিকিৎসা চলে পঙ্গু হাসপাতালেই। সিএমএইচ থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে আসলে পায়ে রড থাকার কারণে কয়েকদিন পরপরই আবার সিএমএইচ এ যেতে হয়। কিন্ত এখন এই অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো টাকা পয়সা আমার কাছে নেই। এমন এক পরিস্থিতে আছি আহত ৪জনের চিকিৎসা করানো সামর্থ আমার আর নেই। অন্যদিকে আমার স্ত্রীর পায়েও অপারেশন করাতে হবে। তার আরো দুইটা অপারেশন দরকার। এসব চিকিৎসা করাতে এতো টাকা পয়সা কই পাই। আমার মেয়ের মৃত্যুর পরে সরকারের ঘোষণাকৃত টাকাটাও আজ পর্যন্ত পেলাম না। সেটাও পাবো কিনা সন্দেহ। অন্যদের দেয়া টাকা আর আত্মীয়য়স্বজনরা আমাদের কিছু সাহায্য সহযোগীতায় চলছে চিকিৎসা। কিছুদিন প্রাইভেট ক্লিনিকেও চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু এইভাবে আর কতো। রেল দুর্ঘটনা আহত ছেলে নাফিসের হাত ও বুকের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তার হাতে ও বুকে চিকিৎসা প্রয়োজন।

আহত নাজমা আক্তার জানান, রেল দুর্ঘটনায় তো চিরদিনের জন্য আমার বুকের ধন সোহা মনিকে হারালাম। কিন্তু এই ঘটনায় আমরা যারা আহত হয়েছি এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অন্তত:পক্ষে সরকারের ঘোষিত টাকাটা যদি হাতে পেতাম তাহলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। তবে শুরু থেকেই আমাদের পাশে থেকে দেশ-বিদেশের অনেক শুভাকাঙ্খি চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। তাদের এই সহযোগীতা যদি না থাকতো তাহলে আমরা হয়তো বেঁচে ই থাকতাম না।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মৃত্যুর পরপর আমরা নিহত’র পরিবারের সব তথ্য ও কাগপপত্র জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রেল মন্ত্রাণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে টাকাটা পায়নি সেটা আমি জানতাম না। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের হাতে কোনো কিছু আসেনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ নভেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাক-চট্রগ্রাম রেলপথের ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মন্দবাগ রেল ক্রসিংয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্ত:নগর তূণা নিশীথার মধ্যে এই দুই রেলের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১০জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরো ৬জনের। এ ঘটনায় নিহত হয়  বানিয়াচং তাম্বুলিটুলা মহল্লার সোহেল মিয়ার একমাত্র কন্যা আদিবার আক্তার সোহা। গুরুতর আহত হন সোহেল, তার স্ত্রী নাজমা আক্তার, সোহেল মিয়ার ছেলে নাফিস ও শ্বাশুড়ি রেনু বেগম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত