মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

০৯ মার্চ, ২০২০ ২৩:০০

সুনামগঞ্জে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দুই হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা

বাংলাদেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এই ভাইরাস মোকাবেলায় কাজ শুরু করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একইসাথে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশের হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নবনির্মিত হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা আইসোলেশন স্থান।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে সকল উপজেলায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন বা তার মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যাবে সেজন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্থান নিয়ে করা হয়েছে করোনা আইসোলেশন। যার মধ্যে ওয়ার্ড দুটিকে আলাদা করে ২৫-২৫ এ ভাগ করে নেওয়া হয়েছে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে। তাছাড়া পরিস্থিতি যদি খারাপ হয় তাহলে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় নতুন নির্মিত হাসপাতালেও ব্যবস্থা করা হয়েছে আরও ৫০ শয্যার।

তাছাড়া বিদেশ ফেরত মানুষদের জন্য আলাদা কোন কোয়ারন্টোইন এ রাখার ব্যবস্থা এখনো না করা হলেও পরিস্থিতির সাথে সাথে কোয়ারন্টোইনের ব্যবস্থা করে ফেলা হবেও বলে জানা যায়। তাছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়া হঠাৎ, জ্বর, সর্দি কাশি হওয়া রোগীদের জন্য করা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। পুরাতন হাসপাতালেরই অন্য একটি কক্ষে চিকিৎসা দেওয়া হবে তাদের। তাছাড়া কোন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না সেজন্য কোন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকলেও এবং অসময়ে যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে সুনামগঞ্জে হবে না করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা।

তার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর দেওয়া হট লাইনে ফোন করলেই তাদেরই লোক গিয়ে সেই ভাইরাসের নমুনা সংরক্ষণ করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে থাকছেন ১০ চিকিৎসক। এদিকে সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। এমনকি সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটকে উপদেষ্টা করে এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে সভাপতি ও সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে করা হয়েছে ১১ সদস্য বিশিষ্ট করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি।
 
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসাপাতলে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাবেক শিশু ওয়ার্ডকেই বেছে নেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে। কিন্তু আইসোলেশন ওয়ার্ড চিহ্নিত করা হলেও এখনো রাখা হয়নি বেড-সিট। পুরোনো ওয়ার্ডের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ায় এবং এখনো তেমন গুরুত্বসহকারে বিষয়টি না দেখার কারণে এখনো ওয়ার্ডে বেড-সিট করা হয়নি বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরতরা। তাদের দাবি কোনো রোগী বা সন্দেহভাজন কেউ যদি আসেন তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাকে দেওয়া হবে চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা।
 
সাবেক সিভিল সার্জন ও বর্তমান জেলা বিএমএর এর সভাপতি ডা. আব্দুল হেকিম বলেন, সুনামগঞ্জে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি শুনেছি সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে সেটি পর্যাপ্ত। যদি কোন ব্যক্তি মনে করেন তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা তার লক্ষণগুলো এমন হয় তাহলে অবশ্যই থাকে হাসপাতালে যেতে। তাছাড়া যেহেতু সুনামগঞ্জ হাওর প্রধান জেলা তাই সেখানের মানুষদের সাবধানতা অবলম্বন করারও পরামর্শ দেন তিনি।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনটিকে আমরা করোনা ভাইসারে সন্দেহভাজন ও যদি আক্রান্ত রোগী আসেন তাহলে সেখানেই ব্যবস্থা করা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড । করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল শতভাগ প্রস্তুত রয়েছে।  

সিভিল সার্জন ডা. শাসম উদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমার শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ৫০ শয্যা এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নতুন নির্মিত ভবনে ৫০ শয্যা করে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে একটি ওরিয়েন্টশনও করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত