বড়লেখা প্রতিনিধি

৩০ মার্চ, ২০২০ ২২:৩৮

বড়লেখায় দুর্দিনে অসহায় মানুষের পাশে এক ব্যবসায়ী

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটি ঘোষণার পাঁচদিন অতিবাহিত হচ্ছে। ছুটিতে সারা দেশের মত গত কয়েকদিন ধরে বড়লেখা অঘোষিত ‘লকডাউন’ অবস্থায়। এ অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। চোখের সামনেই খেটে খাওয়া মানুষগুলো এখন কর্মহীন।

এদের কেউ বাজারে প্রতিদিন সবজি বিক্রি করতেন, আবার কেউ দিনমজুরি করতেন। তাদের আয়েই সংসার চলেছে। তারা আর সবজি নিয়ে বাজারে আসছেন না। গ্রামে দিনমজুরির কাজ করার সুযোগও নেই। হঠাৎ কর্মহীন হওয়া মানুষগুলোর আর সংসার চলছে না। এ বাস্তবতা চোখের সামনে দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি এক তরুণ মুদি ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানা আসাদ। অসহায় মানুষগুলোর দুর্দিনে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে দাঁড়িয়েছেন।

নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থে গত দুদিনে তার এলাকার ৮০টি কর্মহীন পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। আসাদুজ্জামানের বাড়ি বড়লেখা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাজিটেকা বারইগ্রামে। তার ব্যবসা বড়লেখা উপজেলা সদরের হাজীগঞ্জ বাজারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা হাজীগঞ্জ বাজারে আসাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই সুবাদে বাজারে যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন। বাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজের সাথে যারা জড়িত আছেন, কমবেশি সবাইকেই আসাদ চিনেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ছুটি ঘোষণার আগে থেকেই বড়লেখায় জনজীবনে স্থবিরতা নামতে শুরু করে। ছুটি ঘোষণার পর এই কদিন থেকে সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও কমে যায়। এতে সবজি বিক্রি কমে যায়। সবজি বিক্রেতারা আর বাজারে আসেন না। নিয়মিত যারা সবজি বিক্রি করেন, তাদের অবস্থা হচ্ছে ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ মানুষের মতো। সবজি বিক্রি বন্ধ হওয়ায় তাদের সংসার আর চলে না। একইরকম এলাকার কিছু মানুষও আছেন, যারা বাজারকেন্দ্রিক নানা কাজ করে প্রতিদিন আয় করেন। হঠাৎ করে বাজার স্থবির হওয়ায় তাদেরও কাজ হারিয়েছে। অনেকদিনের চেনাজানা মানুষগুলোর কষ্ট আসাদকে পীড়া দেয়। তিনি আর নীরব থাকতে পারেননি। দুই বন্ধু নাজমুল হোসেন ও কবির হোসেনকে সাথে নিয়ে তার ওয়ার্ডের এরকম মানুষের তালিকা তৈরি করেন।

নিজের টাকায় খাদ্যপণ্য কিনে প্যাকেট করেন। তারপর তালিকা ধরে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকেট পৌছে দেন। প্রতিটি প্যাকেটে রয়েছে ৫ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি মশুর ডাল ও ১ লিটার তেল। গত রোববার (২৯ মার্চ) বিতরণ করেন ৬০টি পরিবারে। সোমবার (৩০ মার্চ) বিতরণ করেন আরো ২০টি পরিবারে।

ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ সোমবার (৩০ মার্চ) বলেন, ‘মানুষগুলোকে আমি চিনি। কেউ কেউ সবজি বিক্রি করেন। কেউ করেন দিনমজুরি। করোনা পরিস্থিতিতে ছুটি হওয়ায় তাদের কারো কাজ নেই। চোখের সামনে মানুষগুলো কষ্ট করছে। এটা দেখে আর ভালো লাগেনি। কারো দিকে না তাকাইনি। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত