নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:২২

ত্রাণ বিতরণে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণের প্রেক্ষিতে দেশে প্রায় অঘোষিত লকডাউন চলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ ও দিনমজুরেরা। সঙ্কটে পড়া এসব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা করা হচ্ছে মানুষকে। তবে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময় অনেকক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মানা হচ্ছে। লোকজন জড়ো হয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

মঙ্গলবার থেকে নগরীর দরিদ্র মানুষদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিকরণ শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সে রাতে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন সিসিক মেয়র, কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তারা। ত্রাণ বিতরণের একাধিক ছবিতে দেখা যায়, গাদাগাদি হয়ে দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা।

কেবল সিটি করপোরেশন নয়, সিলেটে আরও কয়েকটি গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে দেখা গেছে, লোকজন জড়ো হয়ে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

যদিও সংক্রামক হওয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে এই সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মানছেন না কেউ।

সিলেট নগরীসহ সবকটি উপজেলায় এখন প্রতিদিনই চলে ত্রাণ, মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই বিতরণ। এসব বিতরণ করতে গিয়ে প্রচুর জনসমাগম হচ্ছে। যদিও জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু জনসমাগম এড়াতে পারছেন না জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনেকই আবার যারা ত্রাণ নিচ্ছেন তাদের এক ফুট দূরে দূরে বসাচ্ছেন কিন্তু যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের লাইনে উপচে পড়া ভিড়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক দেবপদ রায় সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত এক মিটার দূর দূর দাঁড়াতে হবে। সবাইকেই এটা মেনে চলা উচিত। নতুবা বিপদ হতে পারে।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) নগরীতে হতদরিদ্রদের খাদ্য ও বস্ত্রের যোগান দিতে যাত্রা শুরু করে ‘মানবতার ঘর’ নামের একটি সংগঠন। তাদের সামগ্রী বিতরণেও সবাই গা ঘষাঘষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ওই সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের।

বুধবার (১ এপ্রিল) সিলেটের জৈন্তাপুরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন ও জৈন্তাপুর ফটোগ্রাফি সোসাইটি। সেখানেও একই ভাবে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ত্রাণ দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় শ্রী কৃষ্ণ সেবা সংঘ উদ্যোগে অতিদরিদ্র,দিনমজুর,কর্মহীন ও অসচ্ছল শতাধিক পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময়ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ভঙ্গ করেন সরকারি নির্দেশনা।

বুধবার আটাব সভাপতি মো. আব্দুল জব্বার জলিলের অর্থায়নে সিলেটে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পিপিই প্রদান করা হয় জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই পিপিই বিতরণের সময়ও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা। একই দিনে হবিগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সেই ত্রাণ বিতরণের কেউ মানেননি সরকারের ঘোষিত সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা।

করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি শুরু পর থেকেই সচেতনতামূলক লিফলেট, স্যানিটাইজার, মাস্ক, বিতরণ শুরু করেন সিলেটর সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বুধবার (১ এপ্রিল) বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সহায়তা সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান নাট্য পরিষদের নেতারা।

সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি দাশ গুপ্ত বলেন, আমার প্রথম থেকেই যে কার্যক্রমগুলো হতে নিয়েছি সেগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছি। আমরা সবাই একসাথে জড়ো হয়ে কিছু বিতরণ করি না। আমরা জনপ্রতি একটি করে প্যাকেট নিয়ে মানুষজনের ঘরের ভিতর, বারান্দার সামনে দিয়ে আসছে। আমরা সবাইকে বলি কাউকে ঘর থেকে বের হতে হবে না। আমরা আপনাদের সামগ্রী আপনাদের ঘরে পৌঁছে দেব। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের সহযোগিতা করতে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কল কেটে দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত