রিপন দে, মৌলভীবাজার

০২ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:৫৭

দুর্দিনে মানুষের পাশে নেই মৌলভীবাজারের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ

“সংকটপূর্ণ সময়ে নিজের অবস্থার আলোকে দরিদ্র জনগণের পাশে দাড়ানো জনপ্রতিনিধিদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু এটা হচ্ছে না। নির্বাচন আসলেই তাদের দেখা যায়। দরিদ্র মানুষকে নিয়ে তারা ভোটের রাজনীতি করেন। ভোট শেষে আর সাধারণ জনগনের খবর যেসব নেতা রাখেন না তাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই। রাজনীতি করলে এই সংকটনময় সময়ে এখনই তাদের পাশে দাড়ানো উচিৎ।”

-চলমান করোনাভাইরাস সংকটের সময় রাজনৈতিক নেতাদের এলাকায় না থাকার উদাহরণ টেনে কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম শিপন।
 
করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারেও বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। রাস্তাঘাটও ফাঁকা। যার ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। এই মানুষদের বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করতে সরকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এগিয়ে আসলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নেই জনগণের পাশে। গরীব মানুষদের ত্রাণ বিতরণের মত কার্যক্রমে নেই অধিকাংশ এমপি। পাশে নেই নির্বাচন এলেই যারা এমপি পদের জন্য ভোটে দাঁড়ান তারাও। রাজনৈতিক নেতাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষেরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দরজায় গিয়েছিলেন, এখন সেভাবে খাবার নিয়ে মানুষের দরজায় যান। এই ঘোষণার পরেও অনেক জনপ্রতিনিধি জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও খেটে খাওয়া মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন না। সরকারী দলের পাশাপাশি একই অবস্থা বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাদের।

তবে কেউ কেউ এলাকার বাইরে থাকলেও এলাকায় ঘরে ঘরে সাহায্য পৌছে দিচ্ছেন সহযোগীতা।  মৌলভীবাজার-১ আসনের বর্তমান সাংসদ বন, পরিবেশ ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাবউদ্দিন আহমেদ। গত নির্বাচনে এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তাদের দুজনকেই গত কয়েদিনে এলাকায় দেখা যায়নি। তবে বড়লেখা আওয়ামীলীগের সূত্রে জানা গেছে, শাহাবউদ্দিন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্থ থাকায় এলাকায় আসতে পারছেন না। তবে তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বড়লেখা এবং জুড়ি উপজেলার ১ হাজার ৭’শ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিসে এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তারদের জন্য নিজ উদ্যোগে পিপিই দিয়েছেন।

বড়লেখা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন জানান, মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারছেন না। তবে প্রতিমুহুর্তে প্রশাসন এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছেন। উনার নিজের তহবিল থেকে ১ হাজার ৭’শ পরিবারকে চাল, আলু, তেল, ও মসলা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি গঠন করে ফান্ড গঠন করা হচ্ছে।

এদিকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ মাঠেও নেই ত্রানেও নেই গত নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু। তবে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জীবানুনাসক ছিটানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, ২০ লিটার পানিতে ২ চামচ ব্লিচং পাউডার মিশিয়ে ২০ জায়গায় স্প্রে করে দ্বায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এখনই সময় জনগপণর কাছে যাওয়ার। যারা নির্বাচন এলেই এমপি হতে চান তাদের উচিৎ এখনই মাঠে নামার।

এ বিষয়ে নাসির আহমেদ মিঠু জানান, এখনো আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কোন ত্রান দেইনি। ছাত্রদল প্রতিটি এলাকা জীবানুমুক্ত করার জন্য কাজ করছে। সেই সাথে দলীয় কর্মীদের চাঁদায় ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
 
মৌলভীবাজার-২ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ঐকফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর ও বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহিন। এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়লাভ করেন সুলতান মনসুর। কিন্তু এই দুঃসময়ে তাদের কাউকেই পাশে পাচ্ছে না এলাকাবাসী। করোনা আতংকে ঘরবন্ধী নিম্ন আয়ের মানুষ যখন তাদের খুজছেন তখন কেউ আমেরিকা কেউ ঢাকা। গত নির্বাচনে মহাজোটের পরজাতি প্রার্থী এম এম শাহিন বর্তমানে আমেরিকা অবস্থান করছেন।

এম এম শাহিনের ঘনিষ্টজন সেলিম আহমদ জানান, ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যনা এম এম শাহিন দেশের করোনা পরিস্থিতির ১৫/২০ দিন আগে ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা গিয়ে বর্তমান পরিস্থিতে আটকা পড়েছেন। তবে ঘনিষ্ট জনদের মাধ্যমে তিনি এলাকার খবর নিচ্ছেন এবং সহযোগিতার জন্য একটি তালিকা প্রনয়ন করছেন।   

অন্যদিকে নির্বাচিত এমপি সুলতান মনসুর ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সময় তার ঢাকায় অবস্থান নিয়ে ক্ষুব্দ সাধারণ জনগন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুলতান মনসুর জানান, এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এমপির ব্যক্তিগত উদ্যোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলনে। ব্যক্তিগত কোন আলাদা ফান্ড নেই।

গত নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন জেলা আ’লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। তিনি এলাকায় রয়েছেন। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তরফ থেকে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান। কিন্তু করোনা সংকটের শুরু থেকেই তাকে কিংবা জেলা বিএনপি’র নেতাকার্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসের রহমান ঢাকায় অবস্থান করছেন।   

এবিষয়ে জানতে সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান এর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কেটে দেন। তার ব্যক্তিগত সহকারি শাহাদাৎ সিরাজ জানান, “পৃথক পৃথক ভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে আসতে না পারায় স্যার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু দিতে পারছেন না”।

মোলভীবাজার ৪ আসনে গত নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করেন ঐক্যফন্টের হাজী মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। হাজী মুজিব এলকায় ধনকুবের হিসেবে পরিচিত এবং র্নিবাচনের সময় দুহাতে খরচ করেন এমন জনশ্রুতি আছে কিন্তু চলতি সংকটে তিনি মাঠে নেই।

অন্যদিকে নির্বাচিত এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এলাকায় ব্যাক্তিগত উদ্যোগে সাবান আর মাস্ক বিলি করেছেন এর পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন বরাদ্ধের বন্টনের ব্যাপরে তদারকি করছেন।

আব্দুুস শহীদ এমপি বলেন, আমি ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে ৪ হাজার মাস্ক বিলি করেছি. এতদিন সরকারের ত্রাণ বন্টনের তদারকি করেছি। শুক্রবার থেকে আমার ব্যাক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করব। পাশাপাশি ডাক্তারদেরর পিপিইও আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানিয়েছেন, সরকারের উদ্যেগে জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতিতে ২শ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা বিলি করা হয়েছে। মজুদ আছে ৬শ ৭৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪লাখ ৩০ হাজার টাকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত