জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

২৩ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:০২

করোনার দিনে চাহিদা বাড়ছে ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীদের

সবজি লাগবনি, সবজি? ঠেলাগাড়িতে করে সবজির পসরা সাজিয়ে এভাবেই ক্রেতাদের ডাকেন ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী বিজয় বর্মণ। বাসা থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে পছন্দমতো সবজিও কিনে নিচ্ছেন ঘরবন্দি নারী ও পুরুষরা। তবে বিশেষত নারীরা পছন্দমতো সবজি কিনে নিচ্ছেন।

করোনার এই সময়ে চাহিদা বেড়েছে ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীদের। তাই প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীরা সবজির পসরা সাজিয়ে ঘুরে বেড়ান পাড়ায় পাড়ায়।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করেছে। তাই সবাইকে বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী থাকতে হচ্ছে। সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে এলেও সচেতন মানুষজন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। তাই প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতাদের কদর বেড়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভাটি জামালগড় গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী বিজয় বর্মণ জানান, লকডাউনের ফলে তার বেচাকেনা একেবারেই কমে গিয়েছিল। কারণ অনেকেই নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্য কিনে রেখেছিলেন লকডাউনের আগে। তবে সপ্তাহ পরেই সবজির চাহিদা ও বেচাকেনা বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সবজি ব্যবসায়ী বিজয় বর্মণ বলেন, এখন প্রতিদিন যেখানে সবজি উৎপন্ন হয় সেখান থেকে সবজি কিনে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার সবজি কেনা লাগে। এখন চাহিদাও বেশি। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ২ হাজার টাকার সবজি হলেই হতো। অন্যের জমি থেকে কিনে ঠেলা গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে ভালই চলছি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঠেলাগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করছেন। আলু, লাউ, কুমড়ো, ডাঁটা, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, লতা, বেগুন, পেঁপে, ঢেঁড়স, মূলা, শিম, কাঁচা মরিচ, শসা, লেবু, ধনেপাতাসহ নানা ধরনের সবজি রয়েছে। পাশাপাশি পুঁইশাক, লালশাক, লাউ পাতা, নালিয়াপাতাসহ নানা ধরনের শাঁক বিক্রি হতেও দেখা গেছে।

উপজেলা সদরের শামিমা বেগম বলেন, করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় বাজারে পাঠাচ্ছি না পরিবারের কাউকে। বাসার সামনে সবজিওয়ালা হাঁক ডাক শুনে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি যথাযথভাবে পালন করেই সবজি কেনা যায়। এতে করে পরিবারের সদস্যদের সবজি বাজারে গিয়ে আর শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে না। কিছু সবজি কিনেছি, এগুলো দিয়ে সপ্তাহখানেক চলে যাবে। দাম তেমন একটা বেশি না আর হলেও বাজারে ত আর যাওয়া লাগছে না।
সূর্যেরগাঁও গ্রামে রাশেদা বেগম জানান, তাদের এলাকায় নিয়মিতই ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী আসেন। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ মাছ ব্যবসায়ীরাও আসে। নিজের বাসার সামনে থেকে মাছ-সবজি কিনতে পারায় ঘরের বাইরে মানুষের ভিড়ে গিয়ে বাজার সওদা করতে হচ্ছে না।

হাসপাতাল কোয়াটারে বসবাসকারী সোহেল আহমদ ও মেহেদী হাসান জানান, বর্তমান করোনাভাইরাসের আশংকায় যারা বাড়িতে অবস্থান করছে তাদের কাছে বিক্রি করে ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন আর যারা ক্রয় করছেন তারাই মোটামুটি খুশি। কারণ বাজারে গিয়ে সময় নষ্ট করে জনসমাগম হওয়ার চেয়ে বাড়িতে আসা সবজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবজিই কেনা ভাল। দাম খুব একটা বেশি না।

বিজ্ঞাপন

উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, বিল্লাহ মিয়া ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাজার মূল্যের চেয়ে তারা দাম বেশি রাখছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাইকারি বাজারেই সবজির দাম বেড়ে গেছে। তাই তুলনামূলক ভাবে আগের চেয়ে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। লেবুর দাম একটু বেশি বেড়েছে, তাই এটা বেশি দামে বেচা হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন তারা ২-৩হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারছেন। কোন কোন দিন আরও বেশি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত