
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:২৫
সকালের টেম্পারেচার ১'c। আমাদের ইউনিভার্সিটির বাস স্টপেজে বাংলাদেশ, জার্মান, রোমানিয়া, চেক রিপাবলিক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৩ জন ছাত্রছাত্রী হাজির। ট্যুরিজম, ফটোগ্রাফি, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ছাত্রছাত্রীদের গন্তব্য আটলান্টিক মহাসাগর ভ্রমণে।
আইসল্যান্ডের ব্রিফোস্টে ডিজেবল ভলকানো (সুপ্ত আগ্নেয়গিরি) পাহাড় ঘেরা শহরে কখনো উঁকি মারছে সকালের সোনালী সূর্যের আলো, কখনো বা শুভ্র মেঘে ঢাকা পড়ছে নীল আকাশ। স্থানীয় সময় ঠিক সাড়ে ৮ টায় বাস এসে হাজির। একে একে সবাই উঠে পড়লাম বাসে।
চলতে শুরু করলো বাস। আড্ডায় মেতে উঠলাম। বাস স্থানীয় শহর বরগানেজের দিকে এগুচ্ছে। ঘণ্টা খানেক চলার পর পনেরো মিনিটের যাত্রা বিরতি। ফ্লাক্সে থাকা চা খেয়ে নিলাম। আইসল্যান্ডে কফি বেশি হলেও চা ছাড়া আমরা বাঙ্গালিরা থাকতে পারি না। বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে আমরা ৭ জন বাঙ্গালি। সবাই চা পান করলাম। আবার যাত্রা শুরু। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে আটলান্টিক মহাসাগরের কিনারায়। রাস্তার একপাশে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির সারি। অন্য পাশে বিশাল মহা সমুদ্র। পানির গর্জন। নেমে পড়লাম বাস থেকে। তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু প্রচণ্ড বাতাস। ঠাণ্ডায় হাত পা জমে আসার মত অবস্থা।
পৌঁছেই দেখি আমাদের শিপ রেডি। আগে থেকেই ইউনিভার্সিটি থেকে ভাড়া করা হয়েছিল। একে একে সবাই উঠে পড়লাম। মহা সমুদ্রের দিকে এগুতে লাগলো শিপ। প্রচণ্ড শীতেও বেশ ভালোলাগা কাজ করছিলাম। হঠাত প্রচুর তুষার পাত। তাপমাত্রা নেমে গেলো মাইনাসে। এখানের একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে তাপমাত্রা অতি দ্রুত উঠানামা করে।
প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পড়ে শিপ চলে এলো পুরও মহাসাগরের ভেতরে। উত্তাল ঢেউ। আমি নিজে কিছুটা সরে চুপচাপ জায়গায় অবস্থান করলাম। একা একাই উপভোগ করতে লাগলাম প্রকৃতির লীলা। ক্যামেরা দিয়ে কিছু ওয়াটার ল্যান্ডস্কেপ ছবি নিলাম। মাথায় কিছু কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেল ফোনের নোটপেডে লিখে রাখলাম কিছু কথা- "
প্রকৃতি মহানুভবতার এক নাম
রেখা সীমা রেখা ফেলে চলেছে নীল সমুদ্রে
জনমানবহীন এ জল সীমায় উপলব্ধি করে পথিক, এ পৃথিবী কত সুন্দর, কত করুণ, কত নিদারুণ।
মহাসাগরে একা পথিকের আর্তনাদ
মনে ভালোবাসার সুর
দূর দৃষ্টিতে জলরাশি, এগিয়ে যাবার স্পন্দন
প্রেমের ছোঁয়া।"
আসলে মূলত কবিতা লেখার আগ্রহে নয়, ঠিক সে সময়কার নিজের মনের উপলব্ধিগুলো লিখে রাখলাম। কিছু পরেই সবাই একত্রিত হয়ে আবার গল্প শুরু করলো। আমাদের শিপ যখন ১৪৩ ঘনমিটার এলাকায় পৌঁছল, ব্যাগে থাকা প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা বের করে উড়িয়ে দিলাম। নিজের একটি শখ ছিল বিশাল সমুদ্রের জলরাশির মধ্যে প্রচণ্ড বাতাসে উড়াবো প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা।
ঠিক সেটি করলাম। শিপ ঘুরতে লাগলো আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শিপে চলার সময় মহা সমুদ্রের মাঝখানে পাওয়া যায় কিছু আগ্নেয়গিরি। ভাবতে লাগলাম পৃথিবীর কেমিস্ট্রি কতই না নিদারুণ, কতই না জটিল সুন্দর।
কিছুক্ষণ সেখানে আমরা সবাই ফিশিং করলাম। ডিজিটাল বড়শি দিয়ে হরেক রকমের মাছ ধরলাম সবাই। নিজেও বিশাল বিশাল ৫/৬ টা মাছ ধরলাম। দারুণ উপভোগ্য ছিল ব্যাপারটা। এ রকম চললও আমাদের প্রায় ৪ ঘণ্টার আটলান্টিক ভ্রমণ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ! পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর তালিকা করা হলে সে তালিকার প্রথম দিকে থাকবে এই নামটি। রহস্যময়, ভূতুড়ে, গোলমেলে, অপয়া সব বিশেষণই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের জন্য উপযুক্ত। সারা বিশ্বজুড়ে সব চাইতে আলোচিত রহস্যময় অঞ্চল হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এর রহস্য উদঘাটনের জন্য অসংখ্য গবেষণা চালানো হয়েছে, এই স্থানকে নিয়ে অন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তৈরি করেছে ডকুমেন্টারি। তবু আজো এই স্থানটির রহস্যময়তার নেপথ্যে কি রয়েছে তা জানা সম্ভব হয় নি।
আমরা যদিও সেদিকে যাইনি তবুও বলে রাখি, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকাটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ ত্রিভুজাকার অঞ্চল যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভৌগলিক অবস্থান নির্দিষ্ট নয়। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে। আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সকল অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে বোঝা যায় ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান, পর্তু রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা জুড়ে এটি বিস্তৃত।
মনে মনে ভাবছিলাম, এই জলরাশির মধ্যে লুকিয়ে আছে কতই না রহস্য, কতই না জানা কাহিনী। এসব নিয়ে চলছে বিজ্ঞানীদের অবিরাম গবেষণা।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এর আয়তন ১০৬.৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার (৪১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল); এটি পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থিত। উত্তরে উত্তর মহাসাগর এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর।
আপনার মন্তব্য