তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ২৩:০৩

ফুলের লাল গালিচা বিছিয়ে ডাকছে শিমুল বাগান

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিমুল বাগানের ৩ হাজারের অধিক গাছের ফুটেছে টুকটুকে লাল শিমুল ফুল। দুর থেকে দেখলে মনে হবে যেন রক্ত রাঙা লাল ফুল বিছায়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের। বাগানটিতে প্রকৃতি যেন আপন সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে।

দেশের উত্তর পূর্ব দিকের জেলা সুনামগঞ্জ। এ জেলার তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে যাদুকাটা নদীর তীরে ৯৮বিঘা জমি নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তর এই শিমুল বাগানের অবস্থান।

উপজেলায় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাও গ্রামে এই বাগানটি তৈরী করেন বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জয়লান আবেদিন। তার নামেই এর নাম করন করা হয়েছে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।

বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেশে বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক, সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের আগমন বাড়ছে। বাগানটিকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপার্জনের পথ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক যুবক ছবি তুলে, কেউবা ঘোড়ায় চড়িয়ে, কেউবা ফুসকা চটপটি বিক্রি করে, শিশুরা ফুলের মালা ও বাগানে ভালবাসার চিত্র একে রাখে সেখানে দাড়িয়ে পর্যটকগণ ছবি তুলে টাকা দিচ্ছে এতে করে আয় করছেন তারা।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮ বিঘা (এর মধ্য অর্ধেক সরকারী) অনাবাদি পতিত জমিতে ২০০২সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন সারিবদ্ধ ভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপন করেন শখের বসে। সময়ের ব্যবধানে এই বাগানটিই এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল ফুলের গালিছা বিছায়ে ডাকছে এই শিমুল বাগান। রক্তরাঙ্গা ফুটন্ত শিমুল ফুল গুলো দেখতে এই সময়েই শুধু পর্যটকদের আগমন ঘটে না সারা বছরেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটকগনের আগমন ঘটে এই বাগানে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থ খারাপ থাকার আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও স্যানিটেশন ও হোটেলে প্রর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ শিকার হচ্ছে আগতরা।

বাগানের পাশের মানিগাও গ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমেদ জানান, বাগানে সারি সারি গাছে লাল টুক টুকে শিমুল ফুল ফুটেছে,ফুলের সৌরভ আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক বাগানে পরিবেশটা অন্যরকম। আর এই সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের আগমনও বাড়ছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লতিফ সরকারসহ পর্যটক ও দর্শনার্থীরা জানান, বাগানটিকে বাহির থেকে এক রখম আর ভেতরে আরেক রকম এক কথায় সুন্দর্যে অসাধারণ। কিন্তু আমাদের মত পর্যটকদের জন্য কোনো ধরনের সুবিধা নেই বাগানে। বাগানে স্যানিটেশনের ভালো ব্যবস্থা নেই, প্রর্যাপ্ত স্যানিটেশন না থাকায় নারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়কের অবস্থাও খারাপ।

আরেক পর্যটক শাকিল আহমেদ জানান, বাগানের সৌন্দর্যে মনে ভরে গেলেও বাগান মালিকের পক্ষ থেকে বাগানে পর্যটকদের জন্য আধুনিকায়ন করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে আগতরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এখানে আসার আগ্রহ আরও বাড়বে।

বাগান মালিকের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন জানান, বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও আগত পর্যটকদের জন্য সবোচ্ছ সুবিধা দিতে চেষ্টা করেছি। বাগানে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে আসেন। এখন পর্যটকদের বাড়ছে। শিমুল বাগানে বসেই বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সরকারি ভাবে পর্যটকদের স্বার্থে চলাচলের সড়কটি গুরুত্ব সহকারে দ্রুত মেরামত করলে আগতরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

যেভাবে যাবেন- রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসারি বিভিন্ন ধরেনের বাসে করে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। এর পর সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মটর সাইকেল জন প্রতি ১০০টাকায় লাউড়েরগড় বাজার। বাজার পার হয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান। আবার সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু পাড় হয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিয়ে ও মটর সাইকেলে তাহিরপুর উপজেলা এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগানে যাতায়াত করা যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত